‘ওবায়দুল কাদের’র অবস্থান ঘিরে আলোচনায় সিলেটের ‘কাজি ক্যাসল’

‘ওবায়দুল কাদের’র অবস্থান ঘিরে আলোচনায় সিলেটের ‘কাজি ক্যাসল’

একুশে সিলেট ডেস্ক

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে আত্মগোপনে থেকেও রক্ষা পাননি। সুযোগ বুঝে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দেশত্যাগী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অথচ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় দেশ না ছাড়ার বুলি আওড়ানো কাদের বলেছিলেন- ‘পালাবো না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় উঠবো’। যে উক্তিটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

কিন্তু বিধিবাম, সেই কাদের ওঠেননি ফখরুল সাহেবের বাড়িতে, পালাতে গিয়ে ওঠেছেন সিলেটের এক শিল্পপতির বাড়িতে। সিলেটে আত্মগোপন করে অবস্থান ও দেশ ছাড়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির কয়েকজন কর্মী সমর্থক এ নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আল হারামাইন হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী মাহতাবুর রহমান নাসেরের বিলাস বহুল বাড়ি কাজি ক্যাসলের দিকেই ইশারা করে লেখা হয়- ‘এই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের’।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গদি ছাড়ার তিন মাস পর চলতি মাসের প্রথম দিকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন কাদের। এখনো তিনি সেখানেই আছেন বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ওবায়দুল কাদেরের সিলেটে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বাড়িটির ২ মাসের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক পিযুষ কুমার সরকারকে নিয়ে সিসি ফুটেজ সংগ্রহের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। যদিও এই কর্মকর্তা সিসি ফুটেজ সংগ্রহের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ওবায়দুল কাদেরকে সিলেটের কাজি ক্যাসলে নিরাপদে রাখা এবং তার দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছেন এনআরবি ব্যাংকের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান- এমন গুঞ্জনও রয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ব্যাংকের ওই ভাইস চেয়ারম্যান সা¤প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য যান। সেখানে ৩দিন অবস্থানের পর সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে ফেরেন। ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর তিনি সিলেটে অবস্থান করেন। তাঁর এই সিলেট অবস্থানকে রহস্যজনক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ওবায়দুল কাদেরকে সহযোগিতা করতেই সিলেট এসেছিলেন।

তবে এনআরবি ব্যাংকের লালদিঘীরপাড় শাখার ব্যবস্থাপক পিযুষ কুমার সরকার ব্যাংকের ওই ভাইস চেয়ারম্যানের ওই সময়ে সিলেট অবস্থানের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ৩ মাস আগে স্যার সিলেটে এসেছিলেন।’

শুধু ওবায়দুল কাদের ঘিরেই নয়, ৫ আগস্টের পর কাজি ক্যাসল আওয়ামী লীগের নেতাদের নিরাপদ আস্তানা ছিল বলে আলোচনায় রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ওই বাড়িতে আশ্রয় ও দেশ ছেড়ে পালাতে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ভূমিকা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দলের কর্মীদের স্ট্যাটাস ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছাত্র জনতার বিপ্লব পরবর্তী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন বলে সরাসরি অভিযোগ করছেন খোদ দলের নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একটি সূত্র দাবি করে, সিলেট হয়ে যেসব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়েছেন, তাদের নিরাপদ এক্সিটে বিএনপি নেতা আরিফুল হকের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ঘটনাটি আলোচনায় আসার পর তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দেশ ছাড়ার আগে তিন মাসের বেশি সময় নানা জায়গায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা মামলাসহ প্রায় দুই শতাধিক মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।

এমাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওবায়দুল কাদেরকে আটকের জন্য অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রীর ভাইকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল মতিনকে আটক করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। এছাড়া আত্মগোপনে চলে যান দলটির সব কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। দলের অসংখ্য নেতা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত চলে যান। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ভারত হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায়ও পাড়ি জমিয়েছেন।

আত্মগোপনে থাকা বেশিরভাগই ইতিমধ্যে ভারতে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন। খুবই অল্পসংখ্যক নেতা দেশে রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা দেশ ছেড়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এমপি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff