তারেক হাসান-কুলাউড়া
গোধূলির রাঙা আলোয় ভরা সমস্ত আকাশ। মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। খানিক পরেই রাতের আঁধারে গিয়ে দেখা যায় সবাই পরিবারের কাজে ব্যস্ত। কেউ জ্বালানি কাঠ জোগাড়ে, কেউ মা’কে রান্নাবান্নার কাজে, কেউবা আবার বাবার সাথে অন্যকাজে..। এইরকম দৃশ্য চোখে পড়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা-বাগানের একটি শ্রমিক পরিবারে। যে পরিবারের চার ভাই-ই কথা বলতে পারেনা। অর্থাৎ বাকপ্রতিবন্ধী।
কালিটি চা-বাগানের ৮ নম্বর লাইনের বাসিন্দা রামজনম গড় (৬৫) ও বাসন্তী গড় (৫২)। তাঁদের ২ মেয়ে, ৪ ছেলে। জন্মগতভাবে সব ছেলেই বাকপ্রতিবন্ধী। বড় ছেলে হীরা গড় (২২) বাবা অবসরে যাবার পর বাগানে কাজ করছেন। কানাইলাল গড় (১৪) ও কৃষ্ণলাল গড় (১৪) তারা জমজ ভাই। ছোট ছেলে দিপক গড় (৭)। সুমিত্রা গড় নামে একজন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কমলগঞ্জের ধলই চা-বাগানে। আরেক মেয়ে ল²ী গড়কেও বিয়ে দিতে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না। পাত্রপক্ষ দেখে চলে যায়। একে তো পরিবারের সব ছেলে প্রতিবন্ধী তার ওপর মেয়েটাও স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না। এইজন্য রামজনম গড়েরও আক্ষেপের শেষ নাই।
রামজনম জানান, চার ছেলের মধ্যে শুধুমাত্র এক ছেলে কৃষ্ণলাল প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তিনি মাঝেমধ্যে ঘাস কেটে বিক্রি করে কিছু আয় করেন। তাঁর স্ত্রীও দীর্ঘদিন পক্ষাঘাতগ্রস্থ ছিলেন। ডান হাত দিয়ে কিছু করতে পারেন না। অন্য ছেলেরা ঘরেই থাকে। এতো বড় সংসারে প্রতিদিনের খরচ যোগাতে এখন একমাত্র বড় ছেলের রোজগারই সম্বল।
তিনি আরও জানান, সিলেটে শেখঘাটের বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ছেলেরা দুই বছর পড়েছে। শায়েস্তাগঞ্জেরও একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে কারিতাসের মাধ্যমে পড়েছে। পড়তে ও লিখতে পারে ছেলেরা কিন্তু এ দিয়ে তো কিছুই হচ্ছে না। প্রতিবন্ধী ভাতা তো সবারই পাবার কথা কিন্তু এক ছেলে শুধু পাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আশ্বাস দিয়েছেন তাও কিছু হচ্ছে না।
প্রতিবন্ধী ভাতার বিষয়ে কর্মধা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লছমী নারায়ণ অলমিক বলেন, তাদের পরিবারের একজনকে ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিদের বলেছিলাম তারা এসে প্রতিবন্ধী কার্ড করার জন্য এখনো আসেনি। আসলে কার্ড করে দেব।
রামজনম ও বাসন্তী গড় দম্পতি প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে দিনের পর দিন অবহেলা আর অনাদরে পড়ে থাকবেন এটা কারও কাম্য হতে পারে না।
Leave a Reply