কুলাউড়া প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় এক যুবলীগ নেতার ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টুকে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি এই পদ পেয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা অবিলম্বে তাকে কমিটি থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জহুর ডেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তোফায়েল হোসাইন খান জমসেদ স্বাক্ষরিত এক প্যাডে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে ৩৯ নম্বর সদস্য হিসেবে আজমল আলী শাহ সেন্টুর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ, সেন্টু ২০২২ সালের ১৪ মার্চ বরমচাল ইউনিয়ন যুবলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, ২০২২ সালের মার্চে বরমচাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবেও উপস্থিত ছিলেন সেন্টু। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার সরব উপস্থিতি ছিল এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীদের সাথে তার তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় একটি সূত্রের অভিযোগ, বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের যোগসাজশে ও ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে সেন্টু এই সদস্যপদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া, ২০২৪ সালে জমিসংক্রান্ত একটি বিরোধের জেরে থানায় দায়ের করা এক মামলায় সেন্টু নিজেকে ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান’ হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন। এই ঘটনায় স্থানীয় বিএনপিতে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিভাবে একজন সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের অঙ্গসংগঠনের সভাপতি বিএনপির কমিটিতে স্থান পান, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এ বিষয়ে বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু বলেন, আমার পরিবারের সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি যুবলীগের কেউ নই। আমি একটি মাজারের খাদিম হওয়ায় বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতারা আমার কাছে দোয়া নিতে আসেন। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এসব ছড়াচ্ছে।
অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেন্টু কমিটিতে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করলে নেতারা যাচাই-বাছাই করে তাকে সদস্য করেন। তিনি যে যুবলীগ করতেন, তার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। অতীতে তার দোকানে যুবলীগের অফিস থাকায় হয়তো তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে কমিটিতে রাখতে আমি কোনো তদবির করিনি।
বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জহুর ডেন বলেন, সেন্টু যে যুবলীগ করতেন, সেটার সঠিক তথ্যপ্রমাণসহ কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. রেদওয়ান খান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply