কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুলশিক্ষিকা ও আইন কলেজের শিক্ষার্থী রোজিনা বেগমকে হত্যার দুই মাস অতিবাহিত হলেও মামলার প্রধান আসামি রেজাউল আহমদ সাগর এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার, এলাকাবাসী ও সহকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। পলাতক থাকা অবস্থাতেই প্রধান আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা দিয়ে মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
২৬ মে উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ভাসানীগাঁও গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আব্দুর রহিম ও তার ছেলে সাগর ভেকু মেশিন দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটতে গেলে রোজিনার বোনজামাই জালাল আহমদ বাধা দেন। এসময় তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাকে বাঁচাতে রোজিনা বেগম, তার ভাই হারুন মিয়া ও ভাবী নুরুন নাহার লুবনা এগিয়ে গেলে তাদেরকেও দা ও বল্লম দিয়ে আক্রমণ করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রোজিনা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় রোজিনার দশ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র সন্তানটি এতিম হয়ে পড়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর রোজিনার বড় ভাই শাহজাহান আহমদ বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ও গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আসামি আবুল হোসেন ওরফে সোনাকে গত ৩ জুলাই ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে র্যাবের সহায়তায় গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার তবে মূল হোতা সাগর পলাতক থাকায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
নিহতের ভাই শাহজাহান আহমদ বলেন, ঘটনার দুই মাস পার হলেও সাগরকে গ্রেফতার করতে না পারায় আমরা হতাশ। সে ভিডিও বার্তায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ঘটনার আগেও তার হুমকি নিয়ে থানায় জিডি করেছিলাম।
প্রধান আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা নাজমিন আক্তার, ফজিরুন বেগম, তাসলিমা আক্তার ও শিক্ষক মোসাহদি আহমদ জানান, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে তারা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও প্রধান আসামি এখনও ধরা না পড়ায় তারা পুলিশের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির জানিয়েছেন, প্রধান আসামি রেজাউল আহমদ সাগরকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং অভিযান চলছে।
Leave a Reply