তারেক হাসান, কুলাউড়া
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরে যানজট সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এ শহরে যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। যানজটের কারণে জনজীবন এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শহরের মূল রাস্তায় অফিস, স্কুল শুরু ও শেষের দিকে এবং সন্ধ্যাবেলা যানজটের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। কখনো কখনো অতিরিক্ত যানজটের কারণে কুলাউড়া শহরের দক্ষিণবাজার থেকে উত্তরবাজার আধা কিলোমিটার যাতায়াত করতে ৩০-৩৫ মিনিট সময় অতিবাহিত হয়। যানজটে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও আফিসিয়াল কর্মকর্তাদের। যথাসময়ে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে তীব্র যানজটের কারণে সময়মতো রেলওয়ে স্টেশনে যেতে না পারায় অনেকেই ট্রেন ধরতে পারেন না।
বিশেষ করে কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সম্মুখ থেকে স্টেশন চৌমুহনী পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত যানজট হয়। এছাড়া দক্ষিণবাজার থেকে কাদিপুরগামী সড়কে যানজটের অবস্থা আরো বেশি খারাপ। ফুটপাত না থাকায় সেখান দিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাটারও উপায় থাকে না। মাঝে মধ্যে এ সড়কে একাধিক মালবাহী গাড়ি প্রবেশের ফলে দীর্ঘক্ষণ যানবাহনের জট্লা লেগে থাকে।
অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট গড়ে উঠেছে শহেরের প্রধান সড়কের পাশে। সেগুলোর নির্দিষ্ট কোনো পার্কিং না থাকার কারণে সড়কেই গাড়ি পার্কিং করা হয়। এতে পথচারী ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের মতে, সড়ক প্রশস্ত না থাকা, সড়কের দু’পাশে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকান। প্রধান সড়কে ১০-১২টি অটোরিকশা ও টমটম স্ট্যান্ড। এছাড়াও যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যানবাহনে যাত্রী উঠানো ও নামানো যানজটের মূল কারণ। তাদের মতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলে শহর অনেকটা যানজটমুক্ত হবে।
পৌর শহরের দক্ষিণবাজার থানার সম্মুখ থেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত এলাকায়, কুলাউড়া শহর থেকে উপজেলার ভাটেরা, ভূকশিমইল, রবিরবাজার, গাজীপুর, রাঙ্গিছড়া, শমসেরনগর ও মৌলভীবাজার জেলা শহরে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশার আলাদা স্ট্যান্ড রয়েছে। এ ছাড়াও দক্ষিণ বাজার কাঁচা বাজারের পাশে টমটমেরও একটি স্ট্যান্ড রয়েছে। একইভাবে উত্তরবাজার (সাবেক জুড়ী বাসস্ট্যান্ড) থেকে রেলস্টেশন এলাকার প্রধান সড়কের পাশে কুলাউড়া শহর থেকে উপজেলার গৌড়করণ, ঘাটের বাজার, বিজয়া বাজার এবং স্টেশন চৌমুহনীতে জুড়ী ও বড়লেখায় চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার আলাদা স্ট্যান্ড রয়েছে। এছাড়াও রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটে যাতায়াতের জন্য আলাদা একটি সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড রয়েছে।
সম্প্রতি কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দরা শহরের যানজট ও চলমান ড্রেনের কাজে স্থবিরতাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে পৌর প্রশাসকের সাথে বৈঠক করেন।
গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় শহরের যানজট নিরসনে ঈদের আগে ফুটপাত দখল উচ্ছেদে অভিযানের ঘোষণা দিয়ে তারা অভিযান পরিচালনা শুরু করেন।
পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কিছুদিন পর পর অভিযান পরিচালনা করে চলে যাওয়ার পর আবারও অসাধু ব্যবসায়ী পুনরায় ফুটপাতে বসেন। তাই অভিযানের পর তদারকি রাখার দাবি স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের।
তবে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে পৌরসভা বা প্রশাসনের একার পক্ষে শহরের যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়।
ছবি ক্যাপশন ঃ কুলাউড়া পৌর শহরের দক্ষিণবাজার এলাকার যানজটের চিত্র ।
Leave a Reply