জয়নাল আবেদীন,কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার)
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দুইজ চিকিৎসক থাকলেও নেই এক্সরে ও ইসিজি টেকনিশিয়ান। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ রোগী দেখছেন মাত্র দু’জন চিকিৎসক। তবে কর্মরত নার্সরা বলেছেন হাসপাতালে তিনজন ক্লিনার পর্যায়ক্রমে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকেন। তবে রোগীদের কারনে ময়লা হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ রোগী দেখছেন মাত্র দু’জন চিকিৎসক। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দেখভালও তাদের হাতে। জরুরি বিভাগ, ওয়ার্ড ও আউটডোরে দু’জন চিকিৎসক সেবা প্রদান করছেন। হাসপাতালের আরএমও নিজেই মানসিক সমস্যাগ্রস্ত বলে রোগীদের কাছে পাগলা ডাক্তার হিসাবে পরিচিত। ২০০৯ সালে তিনি এখানে যোগদান করার পর ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাইভেট চিকিৎসক বলেন, এখানের অভিভাবক হচ্ছেন পাগলা ডাক্তার। সেখানকার অবস্থাতো পাগলা গারদের মতোই হবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে রোগীদের প্রতিদিনই অভিযোগ শোনা লাগে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী আসরানা মাদ্রাজী, কাসিম মিয়া, সায়ারুন বেগম বলেন, ডাক্তার লিখে দেয়ার পর সবগুলো ঔষধ ও ইনজেকশন বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। এখানে কোন ঔষধ ফ্রি পাওয়া যায় না। তারা আরও বলেন, চরম নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এখানে থাকতে হচ্ছে। বাথরুম ও টয়লেটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। চরম দুর্গন্ধ। টয়লেটে যাওয়ার মতো কোন পরিবেশ নেই। এখানে ক্লিনার হিসাবে যারা আসেন তারা হাজিরা দেখিয়ে লোক দেখানো কাজ করে চলে যান। তাদের বার বার বলার পরও ওয়ার্ডে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন করেন না। তাদের কাজকর্মও কেউ তদারকি করেন না।
৫০ শয্যার হাসপাতালে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), চার জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, দুই জন মেডিকেল অফিসার ও একজন ডেন্টাল চিকিৎসক থাকার কথা। জুনিয়র কনসালটেন্ট ৪ জনের স্থলে দু’জন থাকলেও প্রেষনে দু’জন ঢাকায়। ফলে দুই জন চিকিৎসক দিয়েই শত শত রোগীর সেবা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালটিতে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান এর অভাবে এক্সরে, ইসিজিসহ কোন পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। রোগীদের এক্সরে, ইসিজি পরীক্ষার প্রয়োজন হলে বাহির থেকে বাড়তি অর্থ খরচে করাতে হচ্ছে। এনেস্থিসিয়া কনসালটেন্ট না থাকার কারনে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করার ফলে ওটির যন্ত্রপাতি বিকল হচ্ছে। টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বাক্সবন্দি রয়েছে। যন্ত্রাংশগুলোও বিকল হওয়ার পথে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, গাইনি ও সার্জারী কনসালটেন্ট পেলে অপারেশন থিয়েটার চালু করা সম্ভব হত। অপারেশন থিয়েটার চালু করলে হাসপাতালের মধ্যে ছোট খাটো অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হতো।
চা বাগানসহ এই উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক লোকের চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে যথাযথ সেবা না পাওয়ায় অর্থ, সময় ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে রোগীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৮ সালে ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরও জনবল সংকটে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। চিকিৎসা সেবার জন্য যে জনবল নিয়োগ করা প্রয়োজন তা করা হয়নি।
আরএমও ডা. সাজেদুল কবির বলেন, আসলে চিকিৎসক সংকটে আমাদের লং ডিউটি করতে হচ্ছে। চিকিৎসক পরিপূর্ণ হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ৫০ শয্যায় হাসপাতাল উন্নতী করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল পাইনি। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেও রোগী দেখতে হচ্ছে। চাহিদা মতো জনবলের বিষয়টি উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী সহ জনবল সংকট রয়েছে।
Leave a Reply