কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
বর্ণাঢ্য আয়োজনে তুমুল হৈ চৈ,আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল,খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখি রাধারলীলাকে ঘিরে কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শনিবার ঊষালগ্নে সাঙ্গ হলো মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরি স¤প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মণিপুরি তাতঁবস্ত্র প্রদর্শনী ও শিববাজার এলাকায় বিশাল মেলা বসেছিল। শুক্রবার দুপুরে কমলগঞ্জের উভয়স্থানে রাখালনৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল রাসলীলা। রাসোৎসবে জাতি, ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সব ধরনের সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এখানকার রাসলীলা বড় উৎসবে রূপ নিয়েছিল।
শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হয়েছিল নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার হাজারো মানুষ। তাদের পদচারণে দুপুর থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরি পল্লী। শনিবার ঊষালগ্নে এ উৎসব শেষ হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ প্রাঙ্গণে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, আদমপুরের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সসহ আরো দুটি মন্ডপ প্রাঙ্গণে মণিপুরি মী-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে হয়েছে মহারাসোৎসব। রাস উৎসব ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। বসেছিল রকমারি আয়োাজনে বিশাল মেলা। উৎসবে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী পর্যটক এসেছেন এখানে। ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।
মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামন্ডপ প্রাঙ্গনে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা ১৮২ তম বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসুচী অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টায় মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি প্রকৌশলী যোগেশ^র সিংহের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ ও নির্মল এস পলাশের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন, পুলিশ সুপার এম, কে, এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম-সেবা, ল²ীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদ্মাসন সিনহা, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন রায়, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ থানার ওসি সৈময়দ ইফতেখার হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে আদমপুরে মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে রাসোৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
সবশেষে রাধা-কৃষ্ণের যুগলরূপের আরতি করা হয়। কিন্তু পরমাত্মা কৃষ্ণ তো জীবাত্মা রাধার সঙ্গে চির-একাত্ম হতে পারেন না। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’র মতো তার আসা-যাওয়ার লীলা। তাই নিশান্তে কৃষ্ণের বচনানুসারে রাধা ও গোপিণীরা নিজ নিজ গৃহে ফিরে যায়। এই প্রত্যাবর্তন গভীর বেদনাবহ, পরমপুরুষের বিচ্ছেদের সুরে ঘেরা। রাধার চোখের জলে ফেরার সে পথ ধোয়া। রাসলীলায় কৃষ্ণসঙ্গ লাভের এই একটি রাত রাধার জীবনে একটি কালেরই প্রতীক, যার আঁধারে প্রতিটি বৈষ্ণব খুঁজে চলে পরমসত্তাকে অনুভবের স্পন্দন। তার আঁচ নিয়ে ভোরবেলা ভক্তবৃন্দ ফিরতে থাকে নিজ নিজ ঠিকানায়।
রাসোৎসব কেন্দ্র করে দেশের নানা জায়গা থেকে সওদাগরের দল এই এক দিনের জন্য আগের দিন থেকে এসে পসরা সাজায়। সঙ্গে থাকে মণিপুরিদের পোশাক, হস্তশিল্প, বইপুস্তক।
Leave a Reply