কালো মাটি দিয়ে ফসল রক্ষা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ,বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা

কালো মাটি দিয়ে ফসল রক্ষা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ,বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা

তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরসহ বিভিন্ন হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় পাহাড়ি ঢল আর আগাম বন্যার কবল থেকে প্রতি বছর শতকোটি টাকা ব্যয়ে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে সরকার। প্রতি বছরে মাটি দিয়ে বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ করায় হাওরে মাটি সংকট দেখা দিচ্ছে। যার ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুরসহ বিভিন্ন হাওরে ৩৫টি স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করেছে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয় আর এখনও মাটির কাজেই শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন হাওর আন্দোলনের নেতারা।

এদিকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বালু আর জ্বালানিতে ব্যবহৃত কালো মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফসল রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ হাওর থেকে কালো মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণকাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।অভিযোগ তুলেছেন হাওর পাড়ের কৃষকগন।
এতে করে বাঁধের স্থায়িত্ব ও গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।

পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে,২০২৩- ২০২৪ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে ৩৫টি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গত বছরের মে মাসে কাজ শুরু হলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। চলতি অর্থ বছরের জুনের মধ্যে ব্লকসহ স্থায়ী বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাঁধে এখনো মাটির কাজ শেষ হয়নি। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পূর্বে বাঁধে মাটি ফেলার কাজের পাশাপাশি ব্লকের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রাধানগর থেকে রায়পুর পর্যন্ত ১৭শ মিটার বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করছে আতাউর রহমান খান লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কাজের শুরুতেই স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন কাজের মান নিয়ে। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দেয়া হচ্ছে বালি ও কালো মাটি। বেশি ভাগ বাঁধে মাটির কাজেই শেষ হয়নি এতে করে বাঁধ দুর্বল হবে বলে আশংকা কৃষকদের।

মাটির বদলে কালো মাটি কেন ফেলা হচ্ছে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেডের কর্মচারীরা চটে যান বাঁধে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের উপর।

এসময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন,দুয়েক গাড়ি কালোমাটি তো আসতেই পারে এতে কি হয়েছে ? এতে কি এমন সমস্যা ? আমরাতো কালোমাটির উপরে অন্য মাটি ফেলছি। আপনারা ভালো মাটি দেখেন না, কেবল কালো মাটি দেখতে পান।

হাওর পাড়ের কৃষকরা জানিয়েছেন,স্থায়ী বাঁধে যে কাজে কালো মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা এলাকার মানুষ সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকে। কালোমাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হলে সেই বাঁধ টিকবে না। এত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেই কাজে দায়িত্বশীলদের খামখেয়ালী না কটে কঠোর নজরদারি রাখতে আহবান জানান কৃষকগন।

খরচার হাওরের কৃষক সুলেমান মিয়া জানান,আমাদের এলাকায় মাটি দিয়েই বাঁধ ঠিকানো কঠিন হয়। এখন কালোমাটি দিয়ে বাঁধ দিলে বাঁধ টিকবে কি করে,বাঁধ দুর্বল হবে।কালোমাটি শুকিয়ে গেলে বাঁধে ফাটল দেখা দিবে। কালোমাটি শুকিয়ে লাকড়ি (জ্বালানি) হিসেবে ব্যবহার হয়। ঢলের পানি আসার সাথে সাথেই পানিতে কালোমাটি মিশে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাঁধে কালো মাটি ব্যবহার বিষয়ে আতাউর রহমান খান লিমিটেড এর তত্ত্বাবধায়ক নুরুজ্জামান আহমদ জানিয়েছেন,বাঁধে কালোমাটি কোনো ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। কালোমাটি বাঁধে দেয়ার বিষয়টি আমি সাইটে গিয়ে দেখব। যদি কালোমাটি ব্যবহার করা হয় তাহলে তা অপসারণ করা হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন,বাঁধে কালো মাটি ব্যবহারের কথা আমিও শুনেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে লিখিত নোটিশ করা হয়েছে যাতে দ্রুতই এই মাটি সরিয়ে নেয়া হয়। এবং গুরুত্ব সহকারে কাজ করার জন্য জানানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff