জামালগঞ্জে হাওরের বুকে নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় — হেমন্তে পাও, বর্ষায় নাও ভরসা

জামালগঞ্জে হাওরের বুকে নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় — হেমন্তে পাও, বর্ষায় নাও ভরসা

মোঃ ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের বুকে দৃষ্টিনন্দন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। বর্ষায় চারপাশে থৈ থৈ পানি, হেমন্তে সোনালী রোদের মধ্যে বিস্তৃত হিজল-করচবন; এমন এক পরিবেশেই বছরজুড়ে চলছে পাঠদান।

হাওর অধ্যুষিত জামালগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটনের সম্ভাবনা। ধান ও মাছই এখানকার অর্থনীতির প্রাণ, কিন্তু শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে এই বিদ্যালয়টি, যা গড়ে উঠেছে ফেনারবাক ইউনিয়নের মাতারগাঁওয়ের হিজল করচ বাগানের পাশে— বর্তমানে যা এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিদ্যালয়টি যেন পানির ওপর ভাসছে। চারদিকে শুধু পানি আর সবুজ গাছের ছায়া। বর্ষায় বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা— আগে ছিল হাতে বাওয়া নৌকা, এখন চলছে ইঞ্জিনচালিত। হেমন্তকালে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটেই বিদ্যালয়ে আসে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনে বর্ষাকালে নৌকার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সকাল-বিকেল শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ গ্রাম থেকে আনা–নেওয়া করে এই নৌকাগুলো। বছরের অর্ধেক সময় হাওরে পানিতে ঘেরা থাকলেও পাঠদান বন্ধ থাকে না। শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অন্য যেকোন বিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি বলেই জানায় স্থানীয়রা।

১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে নিম্ন মাধ্যমিক স্বীকৃতি এবং ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক স্বীকৃতি লাভ করে। এমপিওভুক্ত হয় যথাক্রমে ১৯৮৬ (নিম্ন মাধ্যমিক) ও ১৯৮৭ (মাধ্যমিক) সালে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৯টি গ্রামের ৫৫৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। রয়েছে ১২ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক। পুরনো ভবনের পাশাপাশি ৪ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও অনিয়মের অভিযোগে কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি, যার কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে।

বিদ্যালয়ের চারপাশে হিজল-করচবন ও হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের। অনেকেই নৌকা নিয়ে আসেন বিদ্যালয়ের পাড়ে, কেউ কেউ রাত্রি যাপনও করেন হিজলবনের পাশে।

দুর্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রের মতো স্থাপনা হলেও নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় আজ হাওরাঞ্চলের শিক্ষার আলোকবর্তিকা। জল–স্থলের এই অদ্ভুত মেলবন্ধনের মাঝে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বোনা চলছে প্রতিদিন, আর সেই আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে জামালগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে।

নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত চন্দ্র সরকার জনান, বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার জন্য আরো কিছু নৌকার ব্যবস্থা করা গেলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটা কমে যেত। এবং বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় অনেক সময় গবাদি পশু এসে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন গাছ-গাছালি নষ্ট করে ফেলে। বিদ্যালয়টিতে তেরানগর ব্রিজ পার হয়ে মাতারগাও হয়ে বিদ্যালয় পর্যন্ত এবং লালপুর, বিনাজুরা, দৌলতপুর, খুজারগাও হয়ে বিদ্যালয় পর্যন্ত একটি আবুরা রাস্তা করে দিলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অর্ধেকাংশে কমে যাবে। যাতায়াতের বিরম্ভণার কারণে এবং ঝড় বৃষ্টি থাকলে শিক্ষার্থীরা ঝুকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়।

তিনি আরোও আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি ৪ র্থ তলা ভবনটি সংস্কার ও বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য।

এবিষয়ে বর্তমানে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাম কুমার সাহা জানান, বিদ্যালয়টি লেখাপড়ার মান ভাল থাকলেও যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় শিক্ষার্থীদের ঝুকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, হাওরাঞ্চলের ১৯ টি গ্রামের একমাত্র বিদ্যাপীঠ নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হাওরের বুকে এই বিদ্যালয়টির দুপাশে রাস্তা ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেওয়া জন্য।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff