রাশিয়া কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রি করেছিল

রাশিয়া কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রি করেছিল

আন্তজার্তিক ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের উপায় খুঁজতে গতকাল আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার একটি ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকের স্থান আলাস্কার জয়েন্ট বেস এলমেন্ডর্ফ-রিচার্ডসন ঘাঁটিটি, একসময় ছিল রাশিয়ারই অংশ। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া মাত্র ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এই বিশাল ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু কেন রাশিয়া এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?

আলাস্কা বিক্রির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট ও ভূরাজনৈতিক দুর্বলতা। ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত চলা ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়াকে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং অটোমান সাম্রাজ্যের কাছে অপমানজনকভাবে পরাজিত হতে হয়। এই যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ১৬০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছিল, যা দেশটির অর্থনীতি দুর্বল করে দেয়।

ওই সময় আলাস্কা থেকেও আয় কমে গিয়েছিল। অতিরিক্ত শিকারের কারণে মূল্যবান সামুদ্রিক পশমের উৎস সি অটার প্রায় বিলুপ্ত হয়। ফলে লাভ কমে আসে এবং আলাস্কা রাশিয়ার জন্য একটি অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজয়ের পর রাশিয়া উপলব্ধি করে, আলাস্কাকে রক্ষা করার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত সামরিক বা আর্থিক সংস্থান নেই। আলাস্কার ভৌগোলিক অবস্থান ছিল ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত কানাডার খুব কাছে। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার আশঙ্কা করেছিলেন, ভবিষ্যতে ব্রিটেনের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ হলে তারা সহজে আলাস্কা দখল করে নিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে জার আলেকজান্ডার সিদ্ধান্ত নেন, আলাস্কা বিক্রি করে দেওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এতে একদিকে রাশিয়া প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে, অন্যদিকে ব্রিটিশদের হাতে আলাস্কার দখল চলে যাওয়া ঠেকানো যাবে। যুক্তরাষ্ট্র সে সময় তাদের ভূখণ্ড পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তার করছিল, তারাই আগ্রহী ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।

১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে আলাস্কা কিনে নেয়। প্রতি একর জমির দাম পড়েছিল ২ সেন্টের কম। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১৫ লাখ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড লাভ করে।

তবে সে সময় অনেকে এই চুক্তিকে ‘সিওয়ার্ডের বোকামি’ (Seward’s Folly) বলে উপহাস করেছিলেন। তাঁদের মতে, এটি ছিল শুধু বরফের একটি বিশাল মরুভূমি। কিন্তু ১৮৯৬ সালে ক্লন্ডাইকে স্বর্ণের খনি আবিষ্কৃত হলে এই ধারণা বদলে যায়। এরপর আলাস্কার কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব ধীরে ধীরে স্বীকৃত হয় এবং ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে এটি আমেরিকার ৪৯তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

বিশ শতকের শুরু থেকে আলাস্কার অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আসে। বাণিজ্যিক মাছ ধরা এবং খনিজ; বিশেষ করে তামার খনি একটি বড় শিল্পে পরিণত হয়। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ১৯৬৮ সালে প্রুধো বেতে বিশাল তেলক্ষেত্র আবিষ্কারের পর। তেলের রাজস্ব আলাস্কার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হয়ে ওঠে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য বার্ষিক লভ্যাংশ নিশ্চিত করে। বর্তমানে আলাস্কার অর্থনীতি প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, মাছ ধরা এবং পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff