সর্বশেষ :
বিভক্তি কমাতে সিলেট বিএনপি নেতাদের বৈঠক

বিভক্তি কমাতে সিলেট বিএনপি নেতাদের বৈঠক

একুশে সিলেট ডেস্ক

ঈদের আগে সিলেট বিএনপিতে বিশৃঙ্খল অবস্থা। কেউ কেউ বলছিলেন, চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। নেতাদের মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। আর সেটি প্রকাশও হয় নেট দুনিয়ায়। তবে ঈদের পর এক বৈঠকেই দূরত্ব অনেকটা কমে গেছে সিলেট বিএনপি’র। বৈঠকের পরদিনই একসঙ্গে মঞ্চে বসলেন দুই শীর্ষ নেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট বিএনপি’র নেতাদের ওই বৈঠক হয়েছিল গত শুক্রবার। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিলেট বিভাগ বিএনপি’র সাংগঠনিক নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। বৈঠকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ছাড়া সিলেট বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতারা জানিয়েছেন, ঈদের আগে সিলেট বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন। এরমধ্যে প্রাধান্য পেয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কয়েস লোদীর মধ্যকার ঘটনাটি। এটি ঘটেছিল সিলেটের শহীদ সোলেমান হলে। পর্যালোচনায় দেখা যায়- দু’জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য কেউ দায়ী নয়। ফলে দলের স্বার্থে এসব বিষয় ভবিষ্যতে না করার জন্য তাদের বলা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানিয়েছেন, ওইদিন কয়েস লোদীর বক্তব্যে ‘লাউড’ ছিল। আরিফুল হক চৌধুরীও চেয়ার ছেড়ে উঠে আসা নেতাকর্মীরা ভালোভাবে নেয়নি। ফলে কারও ওপর একক দায় না চাপিয়ে পর্যালোচনা করে বিষয়টির ইতি ওখানেই টানা হয়। বৈঠক শেষে নিজেদের মধ্যে কোলাকুলিও করেন আরিফ ও কয়েস। নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ছিলেন কল রেকর্ড সংক্রান্ত অভিযোগের কাঠগড়ায়। তার মোবাইলে কলটি করেছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যে ঘটনা দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। এ নিয়ে পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনার জন্য দায়ী নেতাদের ব্যক্তিগত সহকারীরা। ঘটনার সময় ইমদাদের সঙ্গে তার ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নামাজে ছিলেন। এজন্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসে কয়েসের ব্যক্তিগত সহকারীর কর্মকাণ্ড। ভুল ছিল এমদাদের সহকারীরও। ফলে বৈঠকে সাংগঠনিক নেতার পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত সহকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইন। তার প্রসঙ্গটিও নিয়ে আলোচনা হয়। পদে ফিরতে তিনি নগর বিএনপি’র নেতাদের গণস্বাক্ষর গ্রহণ করছিলেন। আর সেই কাগজ আটকে রেখেছিলেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কয়েস লোদী।

সাধারণ সম্পাদক ইমদাদের বাসার ঘটনা এটি। কাগজ ছিঁড়ে ফেলার যে অভিযোগ ছিল সেটি অবশ্য টিকেনি। তবে; নাসিমকে পদে ফেরানোর বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বলে জানিয়ে দিয়েছেন ডা. জাহিদ। সেটির সঠিক প্রক্রিয়া কী সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট কিছু বলেননি। এ ছাড়া বৈঠকে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের আরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয় পর্যালোচনার পর দলের স্বার্থে আগামীতে সকল নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন ডা. জাহিদ। ব্যক্তি স্বার্থকে ছাড় দিয়ে দলকে প্রাধান্য দেয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ডা. জাহিদের নেতৃত্বে যে বৈঠক হয়েছে সেটি একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল তেমনি অর্থবহ। ওই বৈঠকের পর নেতাদের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্ব কমতে শুরু করেছে। তারা বলেন, সিলেটের মানুষ বিএনপি’র নেতাদের চোখেই আগামীর সুখী সমৃদ্ধ সিলেটের স্বপ্ন দেখছে। এজন্য নেতাদের প্রস্তুতি নেয়ার সময় এখনই। নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি না করে নিজেরা যেন মানুষের প্রয়োজনে কাজ করতে পারেন সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের তরফ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, ডা. জাহিদের ওই বৈঠকের ফলাফল শনিবার কিছুটা দেখা গেছে। কয়েক মাস পর এক মঞ্চে বসেছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পাশাপাশি বসেছিলেন এই দুই নেতা। এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলার সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও নগর সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। আগামী ২৮শে শে জুন সিলেট বিভাগের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সভা করবেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ওই সভাকে সামনে রেখে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শনিবার সিলেট বিএনপি’র নেতারা ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর এতে সিলেট বিএনপি’র সব নেতারা উপস্থিত হন। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন- আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের একটি প্রস্তাবনা পেশ করবেন। তবে, গত শনিবার যে বৈঠক হয়েছে সেখানে নগরের ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে সিলেট বিএনপি’র নেতাদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff