উৎসবের আমেজে নতুন বছর বরণ

উৎসবের আমেজে নতুন বছর বরণ

একুশে সিলেট ডেস্ক
নববর্ষ উদ্‌যাপন

গ্রাম থেকে শহর—সর্বত্রই ছিল উৎসবের আমেজ। উৎসবের রঙে রাঙিয়েছেন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও।

সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা আর উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করে নিলেন দেশের মানুষ। গ্রাম থেকে শহর, সমতল থেকে পাহাড়—সারা দেশেই উৎসবের আমেজে উদ্‌যাপিত হয়েছে পয়লা বৈশাখ। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের মানুষ সর্বজনীন এ উৎসবে অংশ নিয়ে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠেন।

ঢাকায় রমনার বটমূল থেকে চারুকলা-শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বৈশাখের অনুষ্ঠান। বাঙালির প্রাণের উৎসব ছড়িয়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। উৎসবের রঙে নিজেদের রাঙিয়েছেন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও। শোভাযাত্রা, লোকজ সংস্কৃতি, নাচ–গান–আবৃত্তি সবই ছিল এসব আয়োজনে। দেশের নানা স্থানে বসে বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী মেলা। কোথাও কোথাও
উৎসবের আমেজে নতুন বছর বরণ

প্রথম পৃষ্ঠার পর

কয়েক দিন পর্যন্ত চলবে এসব মেলা। তাতে দল বেঁধে যাচ্ছেন নারী, পুরুষ, শিশুরা। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ লাঠিখেলা ও হাডুডু দেখতেও ভিড় কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। শহরের ছোট–বড় অনেক আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে আয়োজন করেন নানা অনুষ্ঠান।

ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এসব উৎসবে মানুষের পদচারণ ছিল। পুরোনো ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে সবার কল্যাণ কামনায় উদ্‌যাপিত হয় নববর্ষের এসব উৎসব। নববর্ষকে আবাহন জানিয়ে বহুকণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়েছে। ফলে এবারের উৎসবের আয়োজনে কিছুটা ব্যতিক্রমও ছিল। প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। তবে এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ হয়েছে। নেচেগেয়ে হাজারো মানুষ অংশ নেন ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য়। পয়লা বৈশাখের এই বর্ণিল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।

শোভাযাত্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যুক্ত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানও ছিল শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। এ ছাড়া ছিল বিভিন্ন মোটিফ। ছিল বাংলার ঐতিহ্যবাহী মুখোশ। শোভাযাত্রায় প্রতীকীভাবে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশ নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, এবারের নববর্ষের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়। এবার শুধু ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়। ফ্যাসিস্ট সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি।

আরও যত আয়োজন

রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট। আলোর পথযাত্রার আহ্বান জানিয়ে সুরে ও বাণীতে বাংলা ১৪৩২ সনকে বরণ করে নেয় ছায়ানট। ছায়ানটের এবারের আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। দেশ, মানুষ, প্রকৃতিকে ভালোবাসার গান ও পাঠ দিয়ে সাজানো হয়েছিল ছায়ানটের অনুষ্ঠান।

চ্যানেল আই-সুরের ধারা আয়োজিত ১৪৩২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় রাতের আঁধার কেটে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরের উন্মুক্ত চত্বরে যেন প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়েই শুরু হয়েছিল নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সূচনা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের তিন শিল্পীর সরোদের সুরে সুরে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছর ১৪৩২। দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত, লোকগীতিসহ ছিল পঞ্চকবির গান।

গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্কে নববর্ষের উৎসবের আয়োজন করে গুলশান সোসাইটি ও অলিগলি বন্ধু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বৈষম্যবাদী কিংবা সংকীর্ণতাবাদী এবং যারা উৎসবকে সহ্য করতে পারে না, যারা মানুষের আনন্দ সহ্য করতে পারে না, যারা নারীর সক্রিয়তায় ভয় পায়—এ ধরনের কিছু গোষ্ঠী আবারও খুবই সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, এসব গোষ্ঠীর কারণে চট্টগ্রামে বর্ষবরণ উৎসব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মেলায় ভাঙচুর হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর হয়েছে ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।

এই আয়োজনে যোগ দিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ আমরা খুব আবেগের সঙ্গে, খুব নিষ্ঠার সঙ্গে উদ্‌যাপন করি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ওমর সাদাত, অলিগলি বন্ধুর পক্ষে নাভিন মুরশিদ।

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজন করা হয় কনসার্ট। বর্ষবরণ উপলক্ষে এই কনসার্ট ও ড্রোন শোর আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা শহর এবং গ্রামাঞ্চলেও নতুন বছরকে বরণ করতে ছিল নানা আয়োজন।

সংবাদপত্রগুলোতে পয়লা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রতীক এ দিনটি উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff