বানিয়াচং প্রতিনিধি
কাওছার আহমেদ রাসেল:বানিয়াচং দিনদিন বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি ঘটনায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও বানিয়াচংবাসী। কিশোর গ্যাং নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ সচেতন নাগরিক সমাজ।
গত ১লা মার্চ উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের হায়দরপুর গ্রামে রাত ৮টায় মাসুম নামে এক যুবককে দূর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ রহস্য উদঘাটন করে প্রেম সংক্রান্ত পূর্ব বিরুধের জের ধরে এই খুন সংগঠিত হয়েছে।
গত ৩রা মার্চ সন্ধ্যার পর গ্যানিংগঞ্জ বাজারে বাইকের ভেপু হর্ন বাজানো নিয়ে যাত্রাপাশা গ্রামের আতিকও দোয়াখানী মহল্লার কিশোর বাদশা মিয়ার কথা কাটাকাটির জের ধরে রনক্ষেত্রে পরিনত হয় বাজার।পরবর্তীতে রুপ নেয় গ্রাম্য দাঙ্গায়।তাৎক্ষনিক ভাবে বিএনপি নেতৃবৃন্দ উদ্দোগ নিয়ে একদিন পরে বাজার কমিটিসহ সামাজিক ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
নিজেদের আধিপত্য বিস্তার, নারী সংক্রান্ত বিষয়সহ সিনিয়র-জুনিয়রের মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিনিয়ত এসব হামলার শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদরের গ্যানিংগঞ্জ বাজারের কয়েকটি চায়ের দোকান,ইউনিয়ন অফিস,বড় বাজারে কয়টি চায়ের দোকান,৫/৬ নং বাজারও আদর্শ বাজার কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়মিত আড্ডার স্থান হিসেবে পরিচিত। এসব স্থানে যারা নিয়মিত আড্ডা দেন, তাঁরা বানিয়াচং সদরের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সরকারি চাকরিজীবীর সন্তান। ফলে পুলিশ বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়।
বিগত সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান না করা, নিজেদের আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, সিনিয়র-জুনিয়র বিরোধ, প্রেমঘটিত ঘটনা, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে না মেশার কারণে বেশির ভাগ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বানিয়াচং প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশার্রফ হোসাইন বলেন, দিন দিন গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া সদস্যদের কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানদের চলাচল নিয়ে চিন্তিত পরিবার। পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা, রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা থাকলে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, না হলে আগামীতে বানিয়াচংয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা আরও বাড়বে।
বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঠাকুর বলেন, পতিত আ,লীগ সরকারের দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের ছত্র ছায়ায় দিন দিন বানিয়াচংয়ে কিশোর গ্যাং বেড়ে উঠেছে।শরীফ আরো বলেন, সারা দেশের মতো বানিয়াচংয়েও কিশোর গ্যাং সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হওয়ায় এর বিরুদ্ধে দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ঐতিহ্যবাহী বানিয়াচংয়ের সুনাম বিনষ্টকারী কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে এবং এর বিপক্ষে ছাত্রদল সর্বোচ্চ শক্তিশালী অবস্থানে আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। এসব অপকর্মে যারা জড়িত থাকবে, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর আইনি পদক্ষেপ চান ছাত্রদলের এই নেতা।
বানিয়াচং উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মো:খালেদ মিয়া বলেন, বিগত ষোল বছর ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা তাদের রাজনৈতিক পাল্লা ভারি করতে কিশোরদের বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেছে।এই অপসংষ্কৃতির ধারাবাহিকতায় কিশোরদের পড়ালেখা নষ্ট হচ্ছে।এই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রনে সামাজিক এবং পারিবারিক ভাবে সবাইকে ভুমিকা রাখতে হবে।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, যারা নাবালক-অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক, তাঁদের ক্ষেত্রে পুলিশকে সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এটার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন দরকার। পরিবারকে পাশে নিয়ে কাজ করতে হবে। সমাজ মাদক মুক্ত রাখতে হলে নিজের ছেলে মেয়েদের খোঁজ-খবর রাখতে হবে।ছেলে-মেয়ে মাদকসেবীর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে কিনা এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
ওসি গোলাম মোস্তফা এপ্রতিবেদককে আরো জানান,আমাদের কমিউনিটি পুলিশ আছে, বিট পুলিশ আছে, আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠক করি, সচেতনতা বৃদ্ধিতে বানিয়াচং থানা পুলিশ অভিবাবকদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে যাচ্ছে। মাদক নির্মূল, গ্রাম্য দাঙ্গাও কিশোর গ্যাংয়ের মারামারি নির্মূলে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply