আন্তজার্তিক ডেস্ক
হাজারো বিক্ষোভকারী বুধবার জেরুজালেমে সমবেত হয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা অভিযোগ করে, তিনি গণতন্ত্র দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামলা ফের শুরু করেছেন, যা সেখানে আটক জিম্মিদের জীবনের তোয়াক্কা না করেই করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের কাছে জড়ো হয়ে ‘তুমি নেতা, তাই দায় তোমার’ এবং ‘তোমার হাতে রক্ত’—এমন স্লোগান দেয়। এটি ছিল মাসখানেকের মধ্যে জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
জেরুজালেমে পার্লামেন্টের বাইরে আয়োজিত এই বিক্ষোভে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের স্বজনরাও যোগ দেয়।
বিক্ষোভের আয়োজন করে নেতানিয়াহুবিরোধী বিরোধী দলীয় গোষ্ঠীগুলো, যারা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। নেতানিয়াহুর ওই ঘোষণার ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার হুমকি দেখা দেয়। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা চালায়, যা জানুয়ারি থেকে চলা নাজুক যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল।
তেল আবিব থেকে আসা ৬৮ বছর বয়সী জেভ বেরার বলেন, ‘আমরা আশা করি, ইসরায়েলের সব মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দেবে। আমরা থামব না, যতক্ষণ না গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হচ্ছে।’
১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রনি শ্যারন বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, আমাদের আর দেশই থাকবে না—একটি গণতান্ত্রিক দেশ তো নয়ই, বরং একনায়কতন্ত্রে পরিণত হবে।’
বিক্ষোভকারীদের অনেকে ‘আমরা সবাই জিম্মি’ লেখা ব্যানার বহন করছিল।
গাজায় আটক জিম্মিদের স্বজনরা বলছে, হামলা আবার শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের প্রিয়জনদের বলিদান’ করার শামিল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের নজিরবিহীন হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। ওই হামলার পর যুদ্ধের সূচনা হয়। এখনো ৫৮ জন গাজায় আটক রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
জেরুজালেমে বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছে, তিনি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য ব্যবহার করছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর চালানো হামাসের হামলার বিষয়ে কোনো জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, আর রোনেন বারকে বরখাস্তের চেষ্টা ইসরায়েলে গভীর রাজনৈতিক সংকট ফের উসকে দিয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল ও সরকারি বিচারিক উপদেষ্টা গালি বাহারাভ-মিয়ারাকেও সরানোর উদ্যোগ নেয়। তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার দৃঢ় সমর্থক ছিলেন।
এর আগে ২০২৩ সালে একটি বিচারিক সংস্কার প্রকল্পের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্বের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা দেশটিতে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছিল। তবে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সেই আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়।
মদিন শহর থেকে যাওয়া ৫৫ বছর বয়সী ইয়ায়েল ব্যারন বলেন, ‘গত দুই বছর আমাদের জন্য এক দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। আমরা যেন শেষ সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি, সময় ফুরিয়ে আসছে দেশকে রক্ষার জন্য, আমাদের জন্য অক্সিজেন কমে আসছে, যেমন গণতন্ত্রও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।’
সূত্র : এএফপি
Leave a Reply