হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, ১০ বছরে হয়নি ভবন !

হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, ১০ বছরে হয়নি ভবন !

এম,এ আহমদ আজাদ, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি,

মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১০ বছর আগে, কিন্তু এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়নি। কোনোটির ক্যাম্পাসের জায়গাও ঠিক হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের কক্ষে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। কলেজে পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণাগার সংকটে ক্লিনিক্যাল (হাতে-কলমে) শিক্ষার ঘাটতি নিয়েই শেষ হচ্ছে পড়াশোনা।

হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৬ সালে। ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জ নতুন মাঠে এক জনসভায় হবিগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৫০ জন ছাত্র ছাত্রীকে ভর্তির জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে ডা. মো. আবু সুফিয়ানকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ক্লাস নেয়ার জন্য স্থান না পাওয়ায় তখন কোন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনুমোদন পায়নি। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫১ জন শিক্ষার্থী; যার মধ্যে ১৮ জন ছাত্র এবং ৩৩ জন ছাত্রী, নিয়ে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৪ সালে এই কলেজের নাম পরিবর্তন করে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ করা হয়।

হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ক্লাস শুরু করেছে। শ্রেণীকক্ষ হিসেবে নব-নির্মিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির ২য় ও ৩য় তলাকে নির্বাচন করা হয়েছে। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের পাশে সদর উপজেলায় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এই মেডিকেল কলেজ হবিগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত।

চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাতে-কলমে শিক্ষার ঘাটতি নিয়ে শুধু বই পড়েই চিকিৎসক হয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব ক্যাম্পাস ও কিছু ক্ষেত্রে আবাসনসুবিধা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

দেশে মোট মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টি। যার মধ্যে নিজস্ব ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ছাড়া চলছে এই ছয় সরকারি মেডিকেল কলেজ।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজস্ব ভবনে মেডিকেল কলেজ, কলেজের আয়তন, শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি—এই রকম অনেক বিষয়ে শর্ত আরোপ করা হয়। তবে সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কোনো নীতিমালা বা শর্ত নেই। সরকারে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ইচ্ছায় এসব মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা ছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, অবকাঠামো স্থাপন, প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে এভাবে মেডিকেল কলেজ চালানো কাঙ্ক্ষিত নয়। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে না পারলে অর্ধশিক্ষিত চিকিৎসক তৈরি হবে। এতে আর যা–ই হোক, মানুষ মানসম্মত চিকিৎসা পাবে না।

গত বছর থেকে আসন সংখ্যা বাড়ায় ক্লাসরুমের সংকট হচ্ছে মাঝে মধ্যে। আমাদের ল্যাবগুলো খুব ছোট, কোনো কোনোটা যে জায়গা প্রয়োজন তার চার ভাগের এক ভাগ। এ ছাড়া আমাদের একটা ক্যানটিন খুবই জরুরি।

হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়।২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি ৫১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মেডিকেল কলেজটি তার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।[২] কলেজটির অবস্থান হবিগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট, পূর্বে মৌলভীবাজার, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মাঝে অবস্থিত দেশের ৩১তম সরকারি মেডিকেল কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এটি।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা হবিগঞ্জ মেডিকেলে কলেজে আটটি ব্যাচে মোট শিক্ষার্থী ৫০৫ জন। ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষ নিয়ে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের দাপ্তরিক কাজ চলে দ্বিতীয় তলায়। সেখানে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের দুটি পৃথক কক্ষ। বাকি সব শিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় আংশিক ও তৃতীয় তলায় প্রায় তিন হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে পাঁচটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা হচ্ছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ৫১ জনের ধারণক্ষমতার শ্রেণিকক্ষ থাকলেও এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ১০০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষার্থী বাড়লেও শ্রেণিকক্ষের আয়তন বাড়েনি।

কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস দুই ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হয়। হাতে-কলমে শিক্ষার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff