হবিগঞ্জের হামজা চৌধুরীর উত্থান

হবিগঞ্জের হামজা চৌধুরীর উত্থান

স্টাফ রিপোর্টার
হামজা দেওয়ান চৌধুরী। বাবার নাম দেওয়ান গোলাম মোর্শেদ চৌধুরী। মা রাফিয়া চৌধুরী। তাদের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটে। তবে হামজার জন্ম ইংল্যান্ডের লাফবোরো শহরে। খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটিতে।

দল বদলের খবরটা আগে থেকেই শোনা যায়। অবশেষে গতকাল ২৮ জানুৃয়ারী দলবদলটা হয়েই গেল। এবার তারই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলো শেফিল্ড ইউনাইটেড। মৌসুমের মধ্যবর্তী দল বদলে ধারে লেস্টার সিটি থেকে শেফিল্ড ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের হামজা চৌধুরী। চুক্তি অনুযায়ী সেখানে থাকবেন এই মৌসুমের শেষ পর্যন্ত। অবশ্য সেখানে পরে চুক্তি স্থায়ী করার বিকল্পও থাকবে।

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে ঝোঁক ছিল হামজার। তাই তো ৫ বছর বয়সেই তাকে ভর্তি করা হয়েছিল লাফবোরো ফুটবল ক্লাবে। সেখান থেকে একজন ফুটবলার হিসাবে গড়ে উঠেন।

কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে আলোচনায় হামজা চৌধুরী। একসময় হামজা নিজেই বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে তার জন্য খুলছে দুয়ার। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এই ইংলিশ ফুটবলারের লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার স্বপ্ন পূরণ এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ ছিল ফিফার প্লে­য়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির অনুমোদন। বাংলাদেশের ফুটবলামোদীদের বৃহস্পতি তুঙ্গে। এই দিনেই হামজাকে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার অনুমতি দিয়েছে ফিফা।

হামজার বাংলাদেশ দলে খেলা হলে সেটাই কোনো প্রবাসীর প্রথম হবে না। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ফুটবলে যোগ হয়েছিল নতুন অধ্যায়। ওই বছর নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তখনকার ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ লাল-
সবুজ জার্সিতে প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে খেলিয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়াকে। ১১ বছর ধরে বাংলাদেশ দলে খেলছেন ডেনমার্ক প্রবাসী এ ফুটবলার। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

২০২১ সালের ৩ জুনে কাতারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে দ্বিতীয় প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় তারিক রায়হান কাজীর। ফিনল্যান্ড প্রবাসী এ ফুটবলারও প্রায় নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন লাল-সবুজ জার্সিতে। জাতীয় দলের রক্ষণে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি।

জামাল-তারিকের পর তৃতীয় প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছেন রাহবার খান। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কিরগিজস্তানে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলেছেন কানাডা প্রবাসী এ ফুটবলার। এর পর আরো কয়েকজন প্রবাসী ফুটবলার বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার কাছাকাছি ছিলেন।

প্রবাসী ফুটবলারের আলোচনায় এখন বেশি উচ্চারিত হয়েছে দেওয়ান হামজা চৌধুরীর নাম। কারণ তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার। বিশ্বের শীর্ষ লিগগুলোর অন্যতম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। এই লিগের কোনো ফুটবলার বাংলাদেশ দলে থাকাটাই অন্যারকম মর্যাদার। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলে যত খেলোয়াড় আছেন নিঃসন্দেহে তাদের চেয়ে ধারে-ভারে এগিয়ে থাকবেন হামজা চৌধুরী।

লেস্টার সিটির মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হামজা। মূল দলে যোগ দেওয়ার আগে অধিনায়কত্ব করেছেন ক্লাবটির অনূর্ধ্ব-২৩ দলের। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের জার্সিতে ৭টি ম্যাচও খেলেছেন। লেস্টার সিটি ইংলিশ ফুটবল লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে নেমে গিয়েছিল এক মৌসুম আগে। এ মৌসুমে প্রিমিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ারে ফিরে এসেছে দলটি।

যুবক বয়সেই ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি ক্লাবের অনসন্ধানী দলের নজরে পড়েছিলেন হামজা। সে তালিকায় ছিল লেস্টার সিটির অনুসন্ধানী দলও। হামজার বাবা শেষ পর্যন্ত তাকে লেস্টার সিটির একাডেমিতে ভর্তি করিয়েছিলেন। বয়স ১৮ বছর হওয়ার পর হামজার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় লেস্টার। তিনি ২০০৫ থেকে টানা ১০ বছর খেলেন লেস্টার সিটির যুব দলে। মূল দলে খেলা শুরু করেন ২০১৫ সালে। লেস্টার সিটির হামজা মাঝে লোনে খেলেছেন বার্টন অ্যালভিয়নে ও ওয়াটফোর্ডে।

মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল হামজা চৌধুরীর। মাঠে তাকে আলাদাভাবেই চেনা যায়। বয়স ২৭ বছর। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার হামজা খেলে থাকেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে। কখনো কখনো তাকে দেখা যায় রাইট-ব্যাকে খেলতেও। এবার লাল-সবুজ জার্সিতে হামজা দেশকে কী উপহার দেন, সেটাই দেখার অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।

ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া ও ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজীর পর এবার লাল সবুজের জার্সি পড়ে খেলবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী।

সবুজ সংকেতই দিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে জানায়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, হামজা দেওয়ান চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার অনুমতি পেয়েছেন। ফিফার ফুটবল ট্রাইব্যুনালের প্লে­য়ার স্ট্যাটাস চেম্বার এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

ফুটবলার হামজা চৌধুরী নিজেও তার ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘সব কিছু ঠিকমতো চলছে। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আশা করছি শিগগিরই দেখা হবে’।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff