নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা ফাঁদ । ১৬টি শেয়ার হোল্ডারের নামে ৪ কোটি টাকা আত্বসাতের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এক বালু ব্যবসায়ী ঠিকাদার প্রতারণা করে কোটি টাকা ঠকিয়েছে এই অভিযোগে মামলা হয়েছে । বালু উত্তোলন করে বিক্রির কথা বলে ১৬টি শেয়ার বিক্রির ঘোষনা দেন। পওে ৩০ লাখ টাকা করে প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করেন। ঐ বালু ব্যবসায়ী প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে ১৬টি শেয়ার বিক্রি করবেন চুক্তিনামা করেন। যদি ১৬ শেয়ার বিক্রি করেন তাহলে কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সে এখন গা-ঢাকা দিয়ে আত্বগোপনে আছে। এসব প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে ৫জন শেয়ার হোল্ডার আদালতে মামলা করেছেন।
জানাযায়, ইদানিং নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর মধ্যে অবৈধ ভাবে বালু তোলার হিড়িক পড়েছে। কুশিয়ারা নদীর বালু তোলা নিয়ে চলছে নানা রকম প্রতারণার ফাঁদ। সেই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের প্রায় দুই কোটি টাকা টকিয়েছেন মা এন্টার প্রাইজের বালু ব্যবসায়ী মতিউর রহমান । মা এন্টার প্রাইজ এর পরিচালক মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালুর অনুমতি পেয়েছেন বলে এলাকায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচার করেন শেয়ার হোল্ডার বিক্রি করবেন। ১৬ টি শেয়ার তিনি বিক্রি করবেন বলে জানান।
তিনি এবিষয়ে প্রথমে যোগাযোগ করেন শেরপুর মুক্তানগর রিসোর্ট এর মালিক জাবেদ রনি আহমদ এর সাথে। জাবেদ রনি কে তার সাথে ব্যবসায়িক শেয়ার দেয়ার প্রলোভন প্রদান করেন। এক পর্যায়ে জাবেদ রনি ও তার বন্ধু ইমরান আহমদের কাছে থেকে ব্যাংক একাউন্ডের মাধ্যমে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা নেন। কিন্তু কোন লাভ বা শেয়ার না দেওয়ার জন্য ৫টি শেযারে কথা উল্লেখ করে সিলেট চীফ জুটিশিয়াল ম্যাজিট্র্যাট আদালতে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার বিবরনে জানা যায়, আসামী মতিউর রহমান বাদী ও ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ জানায়, সে সরকার বাহাদুর থেকে কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলনের জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত খানপুর মৌজার ১ নং খতিয়ানের ২০১৪,২০১৫, ২২৮০, ৫০৭৬, ৫১৪০ নং দাগের ভূমি হইতে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছে বলে অনুমতিপত্র দেখায় এবং উক্ত বালু উত্তোলন করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে তাই সে ১৬টি শেয়ার প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ত্রিশ লক্ষ টাকা করে বিক্রয় করবে। তখন বাদী ও ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ আসামীর নিকট প্রস্তাব করেন একত্রে ৪টি শেয়ার ক্রয় করলে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া যাবে কি না? আসামী মতিউর রহমান বাদী ইমরান আহমদ ও ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনির সহিত আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বাবদ ৫০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা ছাড় দেন এবং ৪টি শেয়ারের দাম একত্রে ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) টাকা নির্ধারণ করেন, সে মোতাবেক ০৮/০১/২০২৪ ইং তারিখে ৪নং স্বাক্ষীর বাড়ি ১ম ঘটনাস্থলে স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে রাত ০৮.০০ ঘটিকার সময় নগদ ৩০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা আসামীকে প্রদান পূর্বক আসামীর ব্যবসায়িক প্যাডে একখানা চুক্তিপত্র লিখে তাহাতে বাদী ইমরান আহমদ, ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনি ও আসামী মতিউর রহমান স্বাক্ষর করেন এবং বাকী ৯৭,০০,০০০/(সাতানব্বই লক্ষ) টাকা বাদী ও ১নং স্বাক্ষী পরিশোধ করার পর আসামীর সহিত ৩০০ (তিনশত) টাকার নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে সম্মত হোন এবং চুক্তির শর্তমতে ব্যবসার লভ্যাংশ প্রতি মাস অন্তর হিসাব করে আসামী বাদী ও ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনিকে ৪টি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ অংশ বা অংশ লাভ্যাংশ বাদী ও ১নং স্বাক্ষীকে প্রদান করবেন বলে আসামী চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেন। এরপর আসামী নিজে ও তাঁর লোক মারফতে ব্যাংকিং মাধ্যমে ও নগদে সর্বমোট ১,২৯,০০,০০০ (এক কোটি ঊনত্রিশ লক্ষ) টাকা গ্রহণ করেন। যাহাতে বাদী ও ১নং স্বাক্ষীর ৪টি শেয়ার বাবদ ১০০০০০০০(এক কোটি) টাকা এবং অন্যান্য শেয়ার হোল্ডারদের কাছে থেকে বাকী ২৯,০০,০০০ (উনত্রিশ লক্ষ) টাকা ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ একাউন্ট থেকে আসামী গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে উক্ত টাকা গ্রহণ করার পর ০২/১১/২০২৪ ইং তারিখে তিনশত টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বাদী, আসামী, ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনি ও অপরাপর স্বাক্ষীর সম্মুখে ব্যবসায়িক চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হোন। দরখাস্তকারী বাদী ও ১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ ব্যাংক মারফতে টাকা পরিশোধ করার কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ব্যবসার মাসিক হিসাব সম্পর্কে আসামীকে বললে আসামী নানান অজুহাতে সময় ক্ষেপন করিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আসামি মতিউর রহমান গা ঢাকা দেন। পরে শেয়ার হোল্ডার ইমরান আহমদ চৌধুরী বাদি হয়ে আসামির উপর প্রতারণার অভিযোগে সিলেট আদালতে মামলা করলে আদালত এফআইআর গন্যে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় হচ্ছে। ব্যবসায়িক শেয়ার হোল্ডাররা হন্য হয়ে মতিউর রহমানকে খুঁজছেন। কিন্তু তার কোন হদিস পাচ্ছেন না।
এবিষয়ে মামলার বাদি ইমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের বালু ব্যবসায়ী মতিউর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে এখন আত্বগোপনে রয়েছে। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
১নং স্বাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ বলেন, আমি আমার বন্ধু বান্ধব মিলে আমার ব্যাংক একাউন্ডের মাধ্যমে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা তাকে দিয়েছি। এছাড়া নগদে আরও ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন জনের কাছে থেকে তাকে দিয়েছি। এখন আমরা অসহায় হয়ে আদালতে মামলা করেছি। এছাড়া সে নারায়ণগঞ্জের একজন ডেজার ও বালু ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর ৩০ লাখ নিয়েছে আমি সেই চুক্তিনামার স্বাক্ষী। এরকম সে ৩০ লক্ষ টাকা করে মোট ১৬টি শেয়ার বিক্রি করেছে সেটার তার প্যাডে ও তিনশত টাকার ষ্ট্রাম্পে লিখিত ভাবে উল্লেখ আছে।
এবিষয়ে মা এন্টারপ্রাইজের মতিউর রহমানের সাথে মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাকে মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠালে কোন উত্তর দেননি।
Leave a Reply