সিলেটে বিএনপির সেল্টারে আ. লীগ নেতা ওয়াহিদ ঘুরে বেড়ান প্রকাশ্যে!

সিলেটে বিএনপির সেল্টারে আ. লীগ নেতা ওয়াহিদ ঘুরে বেড়ান প্রকাশ্যে!

স্টাফ রিপোর্টার
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীদের নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নেতৃত্বে থাকা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ বিএনপি নেতাদের সেল্টারে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ আন্দোলনের সময় ফান্ডিং করেছিলেন ওয়াহিদ। তার দেওয়া টাকায় নিয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলন দমাতে অস্ত্রের যোগান দেওয়া হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী নেতাদের উপর হামলা ও মামলার স্টিম রোলার চালিয়েছিলেন এই ওয়াহিদ। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্যতম এই অর্থের যোগাদাতা ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ কিভাবে এখনো গ্রেফতার এড়িয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই নিয়ে বিএনপি’র তৃণমূল নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এনিয়ে সোশ্যাল মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী নেতাকর্মীরা।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে ওয়াহিদ মেজরটিলা এলাকার প্রত্যাশা-৬, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রথম কয়েকদিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামালার অর্থ যোগানদাতা ও হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও এখন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয় এখন তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাদের দেখে নেয়ার হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা।

জানা যায়, মেজরটিলা, টিলাগড় ও কোর্ট পয়েন্ট, চারাদিঘীরপার, নাইওরপুল এলাকায় ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলা চালায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় ওই এলকাগুলো গুলিবিদ্ধ হন শিক্ষার্থীরা এবং আহত হন দুই শতাধিক। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে। তবে প্রকাশ্যে সিলেটে চলাফেরা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অজানা কারণে তাকে গ্রেফতার করছে না।

সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজান উদ্দিন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়া হলেও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করছেন। তারা শহিদ ও আহতদের রক্তের সাথে বেইমানী করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির আরেক নেতা বলেন, আমি দেখেছি কিভাবে ওয়াহিদ বাহিনী ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু বিএনপির এক শ্রেণির সুবিধাবাদী নেতারা এখন তাকে আশ্রয় ও প্রশয় দিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। যারা ১৭ বছর আমাদের হামলা, মামল ও নির্যাতন চালিয়েছিল সেই সকল ফ্যাসিস্টদের এখন সুবিধাভোগী নেতারা সেল্টার দিচ্ছেন।

হামলায় আহত এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, চারাদিঘিরপারে এলাকায় সংঘর্ষের পূর্ব মুহুর্তে কাউন্সিলর আজাদ, ওয়াহিদ, জাহাঙ্গীর, মিঠুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-আন্দোলন বিরোধী নানা স্লোগান দেয়। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। সেই মামলার ১০ নম্বর আসামি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ।

৪ আগস্টের ওই হামলায় আহত এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ওইদিন ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসী ওয়াহিদ অস্ত্র হাতে ছিলেন। আমার ছেলে হামলায় আহত হয়েছে। কিন্তু ওয়াহিদ এখনো প্রকাশ্যে ঘুরছে। আমি এর উচিত বিচার চাই।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সিলেটের খাদিমপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, জায়গা দখলসহ, বিএনপি নেতাদের উপর হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধে সব ধরণের অপরাধেই আওয়ামী লীগ ওয়াহিদ যুক্ত ছিল। তবে ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কয়েকদিন সে গা ঢাকা দিলেও বর্তমানে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন বিএনপি, পুলিশসহ সবকিছু ম্যানেজ হয়ে গেছে। আমাকে গ্রেফতার করবে যারা, তারাই তো আমার লোক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিষয়ে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হামলা চালিয়েছিল ও ১৭ বছর বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল তাদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের যদি প্রশাসনের কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হয় আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। আন্দোলনে হামলাকারীদের গ্রেফতারে স্থবিরতা দেখতেছি, তাদের কাজের তেমন স্পিড দেখা যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা কিছু কিছু জায়গা থেকে খবর পেয়েছি বিভিন্ন রাজনৈতিকদল তাদের বাঁচাতে সহযোগিতা করছেন। আমরা প্রত্যাশা করি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এসব থেকে বেড়িয়ে আসবে। প্রশাসন তাদের কাজ করবে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহপরাণ (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছি। হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি হামলাকারী ওয়াহিদসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, আমার নতুন আসছি, অনেককেই চিনি না। অপরাধীর সাথে কোনও সমঝোতার প্রশ্নই উঠে নাহ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff