একুশে সিলেট ডেস্ক
পেনশন, আনুতোষিক সুবিধাসহ বেশ কয়েকটি দাবি ২৭ জানুয়ারির মধ্যে পূরণ না হলে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ (লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিই)।
তবে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকাল হলেও তাদের দাবি পূরণ হয়নি। ফলে তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রাত ১২টার পর থেকে সারা দেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ওই মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়।
এ ছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া ভাতা যোগ করার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।
এই মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। ফলে ফের তারা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির নেতারা বলছেন, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কথা বলছি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশ্বাস দেন আমরা আন্দোলন স্থগিত করি, এভাবেই চলছে। কিন্তু এখন বাজারে যে উর্ধ্বগতি তাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারির প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ রাখব। ট্রেন চালানো বন্ধের বিষয় থেকে সরে আসতে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্পষ্ট চিঠি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওনাদের বারবার সময় দিয়েছি, আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলছেন, বিষয়টি নিয়ে স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
Leave a Reply