জীবনমান উন্নয়নে কর্মসংস্থান প্রয়োজন সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠীর : জীবন যন্ত্রণা -৩

জীবনমান উন্নয়নে কর্মসংস্থান প্রয়োজন সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠীর : জীবন যন্ত্রণা -৩

সুবর্ণা হামিদ
হিজরা বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য কর্মসংস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ তারা সমাজের মূলধারার কাজকর্মে অংশগ্রহণে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে আমাদের দেশের হিজরা সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রথাগত কর্মসংস্থান পেতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

তাদের জন্য কাজের সুযোগ সীমিত হওয়ার কারণ অনেক, যার মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব, এবং সামগ্রিকভাবে সংস্থান ও সুযোগের অভাব রয়েছে।

বিশেষ করে সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য কর্মস্থল তৈরি করা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সাফল্য অর্জন করতে পারে।
শুধু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন নয় আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্যও কর্মসংস্থান চায় সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠীর।

হিজড়া জনগোষ্ঠী, যাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে সমাজের নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে । তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত, যার কারণে তারা অনেক সময় অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতিত হয়ে থাকে।

এই জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থান প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা খুব দরকার। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন খাতে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সেবা খাত, হিজড়া জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এতে তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারে এবং সমাজে পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে। সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই আছেন লেখাপড়া জানা তারা যদি ভালো কোন কর্মসংস্থান পায় তাহলে তাদের জীবন মান উন্নত করতে তারা সক্ষম হবে।

এ ব্যাপারে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বললে পায়েল হিজড়া সবুজ সিলেটকে জানান – আমরা সমাজের মধ্যে খুব অবহেলিত জনগোষ্ঠী, কিন্তু এর মধ্যে থেকেও আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি।  কিন্তু এই লেখাপড়াকে কোন কাজে লাগাতে পারছি না। আমাকে যদি সরকারি বা বেসরকারি কোন ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হতো তাহলে হয় তো আমার এই কষ্ট স্বার্থক হতো।

লিপি হিজড়া জানান- আমরা এভাবে হাত পেতে খেতে চাই না। আমাদেরকে ভালো কোন কাজের সুযোগ করে দিলে আমরা আমাকে জীবনটা সবার মতো সাজিয়ে নিতে পারতাম।

কর্মসংস্থান না থাকায় বেশির ভাগ হিজড়া নানা ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে থাকে যার কারণে সমাজে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলতা।

তবে ইদানিং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং কর্মশালা আয়োজন করা হচ্ছে, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যেমন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ভাষা দক্ষতা, ও অন্যান্য পেশাগত কোর্স যা কর্মসংস্থানে তাদের সুযোগ বাড়ায়।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক আব্দুর রফিক সবুজ সিলেটকে বলেন – আমরা সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি যাতে করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু এতে কোন কাজ হয় না। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সেটাকে তারা আর কাজে লাগায় না, তারা তাদের আগে জায়গায় চলে যায়। কিন্তু এভাবে তো তাদের জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়, তাদেরকে আরো আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।হিজড়াদের মধ্যেও এখন অনেক লেখাপড়া জানা আছে, তারা যদি স্বাবলম্বী হয় তাহলে আমাদের দেশটাও স্বাবলম্বী হবে বলে আমি মনে করি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff