সুবর্ণা হামিদঃ
জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ডে সঠিক তথ্য না থাকায় সিলেটের তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা বের করা যাচ্ছে না। যার কারণে নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে, ব্যাঘাত ঘটছে পরিকল্পিত সরকারী বেসরকারি কাজে। ফলে সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে শুরু বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষকে।
২০১৩ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার ও স্বীকৃতির অংশ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, যাতে তারা সরকারি সেবা, ভোট প্রদান এবং অন্যান্য অধিকার ভোগ করতে পারে।
হিজড়া জনগণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রে লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে “পুরুষ” বা “মহিলা” এর পরিবর্তে “হিজড়া” বা “এফ” (Third Gender) নামে পরিচয় দেওয়া হয়।
এনআইডি কার্ড পাওয়া হিজড়ারা সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সেবা, এমনকি সরকারি সাহায্য পাওয়ার অধিকারী হয়। কিন্তু স্বীকৃতি পেলেও নতুন পুরনো পরিচয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের, কমছে মানুষের সহানুভূতি। তাদের পরিচয় পত্রে হিজড়া লেখা না থাকায় নানা জটিলতা তৈরি হয়। আর এই জটিলতা তৈরিই হয় তাদের পরিবার থেকে।
এই ব্যাপারে হিজড়া জনগোষ্ঠীর কাছে জানতে চাইলে সিলেট হিজড়া যুব কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সুপ্তা হিজড়া সবুজ সিলেটকে বলেন- আমাদের এনআইডি জটিলতাটা আসলে শুরুই হয় পরিবার থেকে। বেশির ভাগ হিজড়াদের পরিবার তাদেরকে পুরুষ বা মহিলা হিসেবে পরিচয় প্রদান করে এনআইডি তৈরি করে দেয়। এখানে অনেক কারণ রয়েছে- এর মধ্যে একটি হলো পৈতৃক সম্পত্তি। আমাদের যদি ছেলে পরিচয় দেয় তাহলে পুরো ভাগ দিতে হবে, আর যদি মেয়ে পরিচয় দেয় তাহলে অর্ধেক সম্পত্তি দিতে হবে এই কারণে। আর যাদের পারিবারিক কোন অবস্থান নেই তারা অনায়াসে এনআইডি তে হিজড়া লেখতে পারবে।
কিছু হিজড়া নাগরিক তাদের পূর্ববর্তী নাম বা লিঙ্গ সংক্রান্ত পরিচিতি পরিবর্তন করতে চায়, তবে সরকারি দলিল এবং অন্যান্য সনদপত্রে পুরানো নাম বা পরিচয় থাকার কারণে আইনি জটিলতা তৈরি হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সাথে কথা বললে তিনি সবুজ সিলেটকে জানান – আমরা তাদের এই সমস্যা গুলো নিয়ে অবশ্যই কাজ করবো। তারা যাতে তাদের সঠিক পরিচয় পায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এর জন্য যদি জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে আইনি পদক্ষেপ থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ নুরুল আলম সবুজ সিলেটকে বলেন – নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে সিলেটে হিজড়া আছেন মোট ৫০ জন এর মধ্যে সিলেট জেলায় আছে ১২ জন,সুনামগঞ্জে ১৬ জন,হবিগঞ্জে ১৭ জন আর মৌলভীবাজারে আছে ৫ জন, এটা আগের হিসাব অনুযায়ী। ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে নতুন হালনাগাদ শুরু হবে, এতে করে তাদের সঠিক সংখ্যা আশা করি বের হয়ে আসবে।
এনআইডি তে হিজড়া লেখা না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হিজরাদের মর্যাদা রক্ষা করতে তাদের আইডিতে হিজড়া লিখা হয় নাই, কিন্তু বায়োমেট্রিকে তাদের সব তথ্য দেওয়া আছে।
Leave a Reply