সর্বশেষ :
অনুমতি না নিয়েই ধোপাজান নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন, উত্তেজনা

অনুমতি না নিয়েই ধোপাজান নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন, উত্তেজনা

সবুজ সিলেট ডেস্ক
সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহৎ বালুমহাল ধোপাজান নদী থেকে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই লিমপেড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভিট বালুর নামে সিলিকা বালু তুলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো বা জেলা প্রশাসন কাউকে না জানিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান দিয়ে মঙ্গলবার বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করে। এ ঘটনায় প্রতিবাদে আজ বুধবার বিক্ষুব্ধ জনতা নদী পারের মনিপুরহাটি এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে।

জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই ঢাকার লিমপেড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মুজাহিদুল ইসলাম মুরাদকে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সিলেট আঞ্চলিক দপ্তরের উপপরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম ধোপাজান নদী থেকে ভিট বালু তোলার অনুমোদন দেন।

বিষয়টি অবগত হয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সিলেট অঞ্চলের সচিব বরাবর চিঠি দেন। চিঠিতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক লিখেন, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান নদীর অক্ষয়নগর, উত্তর রামপুর ও রতারগাঁও মৌজা হতে বালু/মাটি উত্তোলনের জন্য ঢাকার ‘লিমপেড ইঞ্জিনিয়ারিং’কে এক কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ১২৯ ঘনফুট উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে মাটি উত্তোলন করতে হলে জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মতি প্রয়োজন। তিনি এই অনুমোদন বিধিবহির্ভূত বলেও উল্লেখ করেন।

মঙ্গলবার ড্রেজার লাগিয়ে বাল্কহেড দিয়ে বালু তুলে নেওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এসে মৌখিকভাবে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। এ সময় ধোপাজান নদী তীরবর্তী উড়ারকান্দা গ্রামের আব্দুর রহিম, শ্রমিক নেতা হাফিজুর রহমান, পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি আবু নাছার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুর রহিম তাৎক্ষণিক সাংবাদিকদের বলেন, ধোপাজান নদীর তীরে তাদের বসতঘর। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু হওয়ায়  বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শ্রমিক নেতা হাফিজুর রহমান বলেন, ভিট মাটি উত্তোলন করতে গিয়ে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সিলিকা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীর পার ভেঙে আমাদের বাড়িঘর নদীতে যাবে।

পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার বলেন, বেলার মামলা থাকায় ২০১৮ সালের পর থেকে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ধোপাজানের ইজারা দেওয়া স্থগিত করা হয়। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এই মহাল থেকে ভিট বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ায় তিনি অবাক হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ভিট বালু সাধারণত মেঘনা নদী, তিতাস নদী, সুরমা নদীসহ বিভিন্ন নদী থেকেই উত্তোলন করা হয়। ভিট বালু উত্তোলনের নামে উচ্চ দরের বালু লুটপাট করার জন্যই এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ধ্বংস করাসহ বাড়িঘর বিনষ্ট করা হবে। আমরা মনে করি, তারা (বিআইডব্লিউটিএ) এই লুটপাটের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হুরারকান্দা গ্রামের বাল্কহেড ও ড্রেজার মেশিনের মালিক আমিন বললেন, তারা লিমপেড নামের ঢাকার প্রতিষ্ঠানের লোকজনের হয়ে বালু তুলেছেন। বালাকান্দা ময়না মিয়া ও হুরারকান্দার লায়েছও ড্রেজার মেশিন ও বাল্কহেড নিয়ে বালু উত্তোলন করেছে। এই বালু সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালী এলাকায় এনে তুলে রেখেছেন তারা।

বিআইডব্লিউটিএর সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক শরিফ ইসলাম বললেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ধোপাজানের ভিট বালু উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বিআইডব্লিটিএ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, তারা ওখান থেকে ভিট মাটি তুলবেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, এটি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না। এখানে বালু লুটের আশঙ্কা আছে।’

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার করা মামলায় ২০১৮ সাল থেকে সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীর বালুমহাল ইজারা বন্ধ আছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff