সর্বশেষ :
জামান ফেরার গুঞ্জনে তৃণমূলের উৎসাহ-উদ্দীপনা, বিরোধী শিবিরে উদ্বেগ

জামান ফেরার গুঞ্জনে তৃণমূলের উৎসাহ-উদ্দীপনা, বিরোধী শিবিরে উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের রাজনীতিতে ফেরার গুঞ্জন তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁর সমর্থকরা। এই খবরে বিরোধী শিবিরে, বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, এতদিন সিলেট-৪ আসনে বিএনপির যেসকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁদের নিয়ে জামায়াতের বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের খবরে তাঁদের রণভঙ্গ হয়েছে। যদিও জামান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেননি, তবুও জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের সাধারণ জনগণ তাঁকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরগরম করে তুলেছে।

সিলেট বিএনপির ‘ডায়ানামিক লিডার’ হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান দীর্ঘ তিন যুগ ধরে সিলেট-৪ আসনের মানুষের কাছে একজন জননেতা হিসেবে পরিচিত। এই তিন অঞ্চলে তাঁর বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন। মসজিদ, মাদরাসা, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি সবসময়ই সহযোগিতা করে এসেছেন। একজন মানবিক আইনজীবী হিসেবে তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই তিন জনপদের তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘আশার আলো’ ছিলেন জামান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমানে ‘জামান ট্রেন্ড’ চলছে।

বিএনপির দুঃসময়ের এই ত্যাগী নেতা সিলেটে ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন। তাঁর একাধিক সহযোদ্ধাও আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা-গুলিতে আহত হয়েছেন। তাই সিলেট বিএনপির এই ত্যাগী নেতাকে সিলেট-৪ আসনের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন নেতাকর্মীরা।

খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে জামায়াতের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনকে। তিনি অনেকটা নির্ভার হয়ে কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে তাঁর একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট জেলা বিএনপি নেতা আবদুল হাকিম চৌধুরী, সাবেক এমপি মরহুম দিলদার হোসেন সেলিমের পত্মী জেবুন্নাহার সেলিম, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন ও আবদুল হক। এছাড়াও খেলাফত মজলিসের উলামা বিষয়ক সম্পাদক শায়খ আলী হাসান উসামা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ মনোনীত সংসদ পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলীও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

সরজমিনে সীমান্তের এই তিন জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দল ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন থেকে এই তিন উপজেলায় গণসংযোগ, পথসভা সহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে হঠাৎ করে সিলেট বিএনপির জনপ্রিয় নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান দলে ফিরে নির্বাচন করবেন বলে যে গুঞ্জন উঠেছে, তা নিয়ে চায়ের দোকানেও ‘জামান ঝড়’ বইছে। জামানকে নিয়ে তাঁরা কিভাবে আগামীতে মাঠে নামবেন, তার পরিকল্পনা আঁটছেন তাঁর তৈরি কর্মীবাহিনী, যারা বর্তমানে ওই তিন উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। তাঁরা মনে করছেন, অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের মতো হাই-প্রোফাইল নেতা যদি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান, তাহলে এই আসনে বিএনপির জয় নিশ্চিত।

২০১৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন পান অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান ও সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা মরহুম দিলদার হোসেন সেলিম। তবে বয়স বিবেচনায় দিলদার হোসেন সেলিমকে মনোনয়ন দেয় দল। এবার তৃণমূল বিএনপির আশা, হাইকমান্ড সৎ, পরিচ্ছন্ন ও মানবিক নেতা হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানকেই মনোনয়ন দেবে। এই মুহূর্তে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের বিকল্প হিসেবে কাউকে দেখছেন না স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা। কারণ সাধারণ জনগণের মাঝে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ৩৬ বছর ধরে তিনি এই এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলেন। বিশেষ করে করোনা মহামারি এবং ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান ও তাঁর কর্মী-সমর্থকরা সীমান্তবর্তী এই তিন উপজেলার মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। অসহায়-দরিদ্র মানুষের বিয়েশাদী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজে ৩৬ বছর ধরে তিনি সহযোগিতা করে আসছেন, যার জন্য মানুষের মনের মণি কোঠায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন।

জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের একাধিক বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা জানান, অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বিএনপির এক রত্ন। দলের জন্য তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দল ও দলের কর্মীদের দুর্দিনে তিনি বিনামূল্যে আইনী সহায়তা দিয়েছেন। এই অঞ্চলে শুধু নয়, সিলেট বিভাগজুড়েই তাঁর বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, তিনি দলে ফিরে নির্বাচন করবেন এবং সিলেট-৪ আসনে অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে অ্যাডভোকেট জামানের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তাঁর উদ্দেশ্য জনগণের সেবা করা এবং এই অঞ্চলের মানুষের সাথে তাঁর আত্মার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff