সর্বশেষ :
সিলেটের সাদা পাথর কান্ডের পর, কুশিয়ারার সাদা বালিতে থাবা !

সিলেটের সাদা পাথর কান্ডের পর, কুশিয়ারার সাদা বালিতে থাবা !

বিএনপির সাবেক মেয়রকে এই অভিযোগে অব্যাহতি প্রদান। সরকার হারাচ্ছে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব। কুশিয়ার চরগুলো এখন সাদা বালু শূন্য হচ্ছে । দেখার যেন কেউ নেই!!
এম,এ আহমদ আজাদ,নবীগঞ্জ
হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় বালু মহাল কুশিয়ারা নদীর স্বচ্ছ সাদা বালি যাচ্ছে কোথায় ! সিলেটের সাদা পাথর আর নবীগঞ্জের কুশিয়ারার সাদা বালি হচ্ছে বিভাগের এক নামকরা জায়গা। সব সময় বালু খেকোদের নজর থাকে কুশিয়ারা উপর। শুধু সিলেট বিভাগের গডফাদার আর বালু খেকোরা নয়, সারাদেশে সেরা বালু ব্যবসায়ীরা আসেন কুশিয়ারা তীরে বালু ব্যবসা করতে। সরকারের পট পরিবর্তন পরে নামে বেনামে তোলা হয়েছে বালু। কম পক্ষে ১০ থেকে ১৫টি স্থানে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালু তোলা হয়। এসব বালু যাচ্ছে কোথায় কেউ জানেনা। তবে বেশির ভাগ ব্যবহার হচ্ছে ঢাকা সিলেট ৬ লেনের কাজে। অবৈধ বালু তোলার ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। কুশিয়ারা তীরের চরগুলো হচ্ছে বালু শুন্য। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারনে যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে নদী ভাঙ্গন তেমনি পরিবেশ বিপর্যস্থ হচ্ছে।

নবীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ ভাবে সাদা বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যদিও কুশিয়ারা নদীর নবীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি ভাবে বালু উত্তোলনের কোন নির্দেশনা নেই। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, তাকে দুটি পক্ষ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অবগত করলেও তাদের কাগজ পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। তারা অনুমতি পেয়েছেন কি না, পরিবেশ সম্মত ভাবে তুলছেন কি না সেটা দেখার জন্য এবং সাদা বালু উত্তোলনে কোন অনুমতি না দেওয়ার জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এনিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে অবৈধ ভাবে সাদা বালু তোলার জন্য নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আহবায়ক কমিটির সদস্য সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভিন্ন মুখি দূর্নীতির অভিযোগ এনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবরে কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুন্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মাধ্যমে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির ৩ জন যুন্ম আহবায়ক এই অভিযোগ দিয়েছেন।

পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী ও তার সহযোগীদের কর্মকান্ডে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা পরবর্তী নির্বাচনে এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হবে বলে অভিযোগে তুলে ধরা হয়। নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির ৩ জন যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ নুরুল আমিন ও অরবিন্দু রায় স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে তাকে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে তাকে সকল প্রকার পদ পদবি ও প্রাথমিক সদস্য পদ সইগত করা হয়েছে।

বুধবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ড্রেজার মেশিন ও নৌকা দিয়ে সাদা বালু তোলা হচ্ছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তার আগেই বালু খেকোরা সটকে যান।

সাদা বালু উত্তোলনকারী ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের দাবি, তারা নিয়মতান্ত্রিক নিদৃষ্ট সীমানা থেকে সাদা বালু উত্তোলন করছেন। সরকারি ভাবে অনুমোদন নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার তাজাবাদ জেল নং ২১৯ দাগ নং ১হাজার৩ ও দীঘলবাক জেল নং২৭ ও ০৮/২৫ দাগে বালু উত্তোলনের সঠিক কাগজপত্র রয়েছে এবং নির্ধারিত সীমানায় বালু উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

সীমনা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হলে এই বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তরা জয়নাল আবেদীন বলেন, সীমানা নির্ধারণের কোন উদ্যোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। ওসমানীনগর উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর অংশ থেকে বালু উত্তোলনে সরকারি কোন ইজারা নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠিান অবাণিজ্যিক ভাবে কুশিয়ারা নদী থেকে সাদা বালু উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও নবীগঞ্জের সেই সাদা বালু বিক্রি হচ্ছে বাণিজ্যিক ভাবে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নাম করে নদী থেকে ড্রেজার মেশিনে উত্তোলনকৃত সাদা বালু বিক্রি হচ্ছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় মাটি ভরাটের কাজে। বাসা বাড়িসহ ভরাট কাজে সাদা বালি খুবই কার্যকর তাই অবৈধ ভাবে সাদা বালু তুলে সাথে সাথেই বিভি বাসাবাড়ি ও জায়গা জমি ভরাটের কাজে বিক্রি করা হয় উচ্চ দামে।

আর সেই সাদা বালু অবৈধ পন্তায় বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করতে গড়ে উঠে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট নিয়েন্ত্রন করছেন, নবীগঞ্জ ও শেরপুর এলাকার এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্র। তাদের ছত্রছায়ায় একাধিক রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করে ট্রাকযুগে এসব সাদা বালু চলে যায় বিভিন্ন স্থানে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- দীঘলবাক গ্রামে ও দূর্গাপুর, পাহাড়পুর, পারকুল মধ্যবর্তী এলাকায় কুশিয়ারা নদীর উপর বড় বড় একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এতে কাজ করছে শতাধিক শ্রমিক। কুশিয়ারা চরের দীঘলবাক, তাজাবাদ মৌজায় বালু উত্তোলন শেষে সেগুলোকে বড় নৌকায় করে এলাকার কৃষি জমিতে ও নদীর পারের কয়েকটি স্থানে নিয়ে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে এছাড়া ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে পিটুয়া গ্রামের কাছে কয়েকটি স্তুপ করে সাদা বালু রাখা হয়েছে।

এছাড়া বালু উত্তোলনের মেশিন নদীতে বসিয়ে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দুরে বড় বড় পাইপ দিয়ে পারকুল বিদ্যুৎ ফাওয়ার প্লান্টের সংলগ্ন স্থানে, মজলিশপুর, কুমারকাদাঁ মন্দিরের নিকটে এবং দীঘলবাক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সাদা বালু স্তুপ করে রেখে অবাধে বিক্রি করে আসছেন ওই সিন্ডিকেট চক্র।

স্থানীয়রা বলছেন- প্রতিদিন অন্তত কয়েক লাখ টাকার নদীর তলদেশের সাদা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কুশিয়ারা নদী থেকে। যে কারণে নদীর তলদেশে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল বিশাল গর্ত।

স্থানীয় বাসিন্দা মোজাহিদ মিয়া বলেন- অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকা থেকে সাদা বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। সাদা বালু তোলার কারণে হুমকিতে রয়েছে নদী ও নদীর পারের ফসলিম জমি। অনেক স্থানে আবার ঘর বাড়িতেও ধ্বসও দেখা দিয়েছে। তাই এখনই এসব বন্ধ করা জরুরি।

তারেক মিয়া নামে আরো ব্যক্তি বলেন- চক্রটি খুবই প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা নানা ভাবে হয়রানি করে সাধারণ লোকজনদের। তাদের সাদা বালু তোলার কোন ধরণের অনুমতি নেই। অথচ তারা দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ নষ্ট করে বালু উত্তোলন করে আসছে।

হবিগঞ্জ জেলা বাপা’র সাধারণ তোফাজ্জুল সোহেল বলেন- নদীর তলদেশ থেকে অবৈধ ভাবে সাদা বালু উত্তোলন আমাদের পরিবেশের জন্য মরাত্মক হুমকি। এখন এর প্রভাব তেমন একটা না পড়লেও পরবর্তীতে বিস্তর প্রভাব ফেলবে সাদা বালু তোলার ঘটনায়। তাই পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের এ সব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

শাহ মাহমদ ও শেখ জুমান কুরেশী নামে দুই ছাত্র জানান, কুশিয়ারা নদীর ওসমানীনগর অংশ থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিনে সাদা বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গন ও কুশিয়ারা ড্রাইকের উপর দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে সাদা বালু পরিবহনে ঝুঁকিতে রয়েছে কুশিয়ারা ড্রাইক। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের ফলে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন হচ্ছে তীব্র, বিলিন হচ্ছে নদীর তীরবর্তী বাড়ি-ঘর। সম্প্রতি ওসমানীনগর অংশ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সময় তারা ড্রেজার মেশিন ও নৌকা আটক করে থানা ও সেনাবাহীনিকে অবগত করেছেন। বর্তমানে নৌকা ও ড্রেজার সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে রয়েছে।

নবীগঞ্জ পৌর সভার সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন,আমার বিরুদ্ধে সাদা বালু তোলার অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। আমি শেরপুর এলাকায় কোন সাদা বালু তোলার সাথে জড়িত নয়। আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ডাহা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক। আমার জনপ্রিয়তা ধ্বংস করার জন্য আমার রাজনৈতি প্রতিপক্ষ এসব ষড়যন্ত্র করছে। কাগজ পত্রে আমি ডকুমেন্টারি আমি কুশিয়ারা সাদা বালু তোলার সাথে জড়িত নয়। যারা অভিযোগ দিয়েছেন তারা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোনোভাবে নদী থেকে অবৈধভাবে সাদা বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। তবে আমরা যেতে যেতে তারা খবর পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে। বালু তোলার মূলহোতাদের ধরার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরও বলেন, তাকে দুটি পক্ষ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অবগত করলেও তাদের কাগজ পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। তারা অনুমতি পেয়েছেন কি না, পরিবেশ সম্মত ভাবে তুলছেন কি না সেটা দেখার জন্য এবং সাদা বালু উত্তোলনে কোন অনুমতি না দেওয়ার জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন এখানে যারা সাদা বালু তুলচ্ছেন তারা পরিবেশ সম্মত ভাবে তুলছেন কি না দেখার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়া হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff