সর্বশেষ :
গোয়াইনঘাটে এক মামলায় ৩ কোটি টাকার বিছনাকান্দির পাথর ‘হজম’ জাফলংয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান, ৩ জনের কারাদণ্ড পাথর লুটে নাম: ‘হলুদ মিডিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর’ আহ্বান যুবদল নেতা মকসুদের দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় মোটরসাইকেল আটক আর একটি পাথরও যদি সরানো হয়, জীবন ঝালাপালা করে দেব:  ডিসি ‘পুরুষ ভালোবাসি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ঘৃণা করি’ পাথর লুট নিয়ে দুদকের প্রতিবেদন : জামায়াত বলছে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’, এনসিপি বলছে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ নবীগঞ্জে সিএনজি গ্যাস পাম্পে ফিটনেসবিহীন বাস থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত ‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও আর নেই অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের তৃতীয় হার
নবীগঞ্জে সিএনজি গ্যাস পাম্পে ফিটনেসবিহীন বাস থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত

নবীগঞ্জে সিএনজি গ্যাস পাম্পে ফিটনেসবিহীন বাস থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত

“১০টি যান, দুটি মোটর সাইকেল পুড়ে গেছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে
বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের একটি প্যাড ও জালালাবাদ গ্যাসের ডিআরএস সেন্টার”
এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ
নবীগঞ্জে সিএনজি গ্যাস পাম্পে ফিটনেসবিহীন বাসের গ্যাস নেওয়ার সময় আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। পুরাতন বাসের মধ্যে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের আউশকান্দি সিএনজি গ্যাস ষ্টেশনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় বিস্ফোরণে ভয়াভহ অগ্নিকান্ডে ৯টি সিএনজি, একটি বাস ও ২টি মোটর সাইকেল সহ পাম্প পুড়ে ছাই হয়েছে। এসময় ৬জন গুরুতর আহত হয়েছে। তাদেরকে সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। অগ্নিকান্ডে অনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন বলছেন তাদের ধারনা ক্ষতির পরিমান তুলনা মূলক কম হবে, কারন দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করার ফলে মুল পাম্পের গ্যাসের মজুদে আগুন পৌঁছেনি।

পাম্পের পাশেই বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের সাউথ সাউথ প্যাড ও জালালাবাদ গ্যাসের বিতরণ কেন্দ্র ডিআরএস সেন্টার। অল্পের জন্য এই দুটি গ্যাস সেন্টারে আগুণ ছড়িয়ে পড়েনি। জালালাবাদ গ্যাসের বিতরণ ডিআরএস সেন্টার থেকে সারা নবীগঞ্জের আবাসিক সংযোগ ও সিএনজি পাম্পের সংযোগ লাইন রয়েছে। অগ্নিকান্ড থেকে মাত্র অর্ধেক কিলোমিটার দুরে এই দুটি গ্যাস সেন্টার। অগ্নিকান্ডের সাথে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের সাউথ প্যাড ও জালালাবাদ গ্যাসের ডিআরএস সেন্টার চরম ঝুকির মধ্যে ছিল। ঐ সময় জালালাবাদ ডিআরএস সেন্টারের সংযোগ লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়।

সিলেট বিভাগীয় বিস্ফোরক অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক মো: মোস্তফা ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে আউশকান্দি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে একটি পুরোনো ফিটনেসবিহীন বাসে গ্যাস ভরার সময় হঠাৎ বিস্ফোরনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই তা আশপাশে রাখা গাড়িতে ছড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ, বাহুবল ও ওসমানীনগর থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানাযায়, ঢাকা সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি সিএনজি পাম্পে সকাল ৬টার সময়ে একটি বাসে গ্যাস দেওয়ার সময় বিস্ফোরনে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। বাসের মধ্যে গ্যাস দিচ্ছিলেন পাম্পের কর্মী রাসেল পাশেই ছিলেন ম্যানাজার জয়নাল মিয়া। ৩৭ পয়েন্ট গ্যাস দেওয়ার পরে গ্যাসের নলেজ (গ্যাসের পাইপ) ছিড়ে যায়, সাথে সাথে বিস্ফোরন ঘটে। মুহুর্তের মধ্যে অগ্নিকান্ড সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পাম্পে গ্যাস নিতে আসা ১০টি সিএনজি ও বাসটি অগ্নিকান্ডে ভসিম্ভূত হয়েছে।

এসময় সিএনজি পাম্পের তিন তলায় থাকা কয়েকজন কর্মী লাফ দিয়ে নীচে পড়ে গুরুতর আহত হন। আগুন লাগার পর গ্যাস পাম্প সহ বিভিন্ন স্থান থেকে গ্যাস নিতে আসা কয়েক শতাধিক ছোট বড় গাড়ি ও নানান পেশার লোকজন আতংকিত হয়ে শুর চিৎকার করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৫টায় একটি বাস আউশকান্দি গ্যাস ষ্টেশনে আসে। বাসটি সকাল ৬টায় গ্যাস নেওয়ার সিএনজিতে আগুন ধরে যায়। এতে ওই ষ্টেশনে দূর-দূরান্ত থেকে গ্যাস নিতে আসা গাড়ির লোকজন ও স্থানীয়রা নিরাপত্তার জন্য দিক-বেদিক ছুটাছুটি করেন। বিভিন্ন গাড়ির চালকরা দৌড়ে রক্ষা পেলেও গ্যাস পাম্পের কর্মী রাসেল(২৫) ম্যানাজার জয়নাল আবেদিন (৪০) ও শোয়েব আহমদ(৩০) গুরুতর আহত হন। আর ৪জন সিএনজি চালক আহত হন প্রাথমিক ভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।

গ্যাস পাম্পের সহকারী ম্যানাজার দায়িত্বে থাকা আহত শোয়েব আহমদ জানান, আমরা তিন তালার মধ্যে ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ শোনি আগুন, আগুণ শব্দ, উঠে দেখি চারিদিকে আগুন। আমরা তিনজন প্রান বাঁচাতে পিছনে তিন তলা থেকে ধানি জমির কাদার মধ্যে লাফ দিয়ে পড়ে প্রানে রক্ষা পাই। বাসের মধ্যে গ্যাস দিতে গিয়ে বিস্ফোরণ হয়েছে। আমাদের ৬জন আহত হয়েছে। অন্তত পক্ষে প্রাথমিক ধারনা ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিস লোকজন এসে আগুন চেষ্টা করে নিয়ন্ত্রনে আনেন।

আউশকান্দি সিএনজি শ্রমিক সমিতির সাধারন সম্পাদক রোমান আহমদ বলেন, আমাদের সমিতির নয়টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়েছে। উক্ত পাম্প থেকে নবীগঞ্জের শত শত সিএনজি গ্যাস নেয়। আর কোন পাম্প নেই,পাম্পটি পুড়ে যাওয়ার কারনে আমাদের অনেক কষ্ট করে গ্যাস সংগ্রহ সিলেট অথবা বাহুবল উপজেলা সিএনজি পাম্প থেকে। আমাদের ৫/৬জন সিএনজি চালক আহত হয়েছেন।

আউশকান্দি সিএনজি পাম্পের ইঞ্জিনিয়ার এম,এ বাতেন বলেন, আমাদের পাম্পের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে এখন বলা সম্ভব নয়। যে বাসের মধ্যে অগ্নিকান্ড সুত্রপাত হয়েছে, বাসটি পুরাতন ও ফিটনেসবিহীন ছিল বলে আমাদের ধারনা। জালালাবাদ গ্যাসের ডিআরএস লাইনে গেলে ভয়াবহ ক্ষতি সম্ভাবনা ছিল। পাশেই বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের একটি প্যাড রয়েছে।

জালালাবাদ গ্যাসের নবীগঞ্জ আঞ্চলিক বিতরণ কার্য্যালয়ে প্রধান মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, নবীগঞ্জ বাসী ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। অগ্নিকান্ডের সময় আমরা সারা নবীগঞ্জের সংযোগ বিছিন্ন করে দেই। আমাদের ডিআরএস সেন্টারের পাশেই সিএনজি গ্যাস পাম্পে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়।
নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে চলে আসি আগুণ নিয়ন্ত্রন করি। আগুনে ১০ সিএনজি একটি বাসসহ পুরো পাম্প পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত ৪জনকে তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার করে সিলেট পাঠিয়েছি।
.
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ কামরুজ্জামান বলেন, আমরা অগ্নিকান্ডের পুড়ে যাওয়া গাড়ি গুলো উদ্ধার করে কয়েকটি সিএনজি মালিকের জিম্মায় দিয়েছি। বাসটির কোন কাগজ পত্র বা মালিক এখনও পাওয়া যায়নি। বাসের কাগজ পুড়ে গেছে, মালিক পেলে বুঝতে পারবো এটি ফিটনেস ছিল কি না।

বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের দায়িত্বরত শেভরন বাংলাদেশের মিডিয়া কমিউনিটি অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, অগ্নিকান্ডের সময় বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে কোন সমস্যা হয়নি। আমরা সব সময় সর্তক ছিলাম। পাশেই অগ্নিকান্ড হয়েছে, কিছুটা আতংক থাকতেই পারে।

হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে বাসে গ্যাস ভরা হচ্ছিল, সেটি পুরোনো ছিল। রিফিল করার সময় বিকট শব্দ হয়ে আগুন লেগে যায়। এতে একটি বাস, ৯টি অটোরিকশা ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। তবে রিফুয়েলিং স্টেশনের মূল গ্যাসের মজুতে আগুন না পৌঁছায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। পাশেই বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের একটি প্যাড ও ডিআরএস সেন্টার ছিল ওরা হয়তো সংযোগ বিছিন্ন না করলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বাসটি দেখেই মনে হয়েছে ফিটনেসবিহীন ছিল । তবে চালক পলাতক হওয়ার কারনে পরীক্ষা নিরিক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

সিলেট বিভাগীয় বিস্ফোরক অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক মো: মোস্তফা ফারুক বলেন, আমরা পরিদর্শন করে প্রাথমিক ভাবে তদন্তে প্রমানিত হয়েছে বাসটি ফিটনেসবিহীন ছিলো। আমরা সংশ্লিষ্ট নবীগঞ্জ থানাকে বাস চালক ও মালিকৈর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা প্রতিটি সিএনজি পাম্পকে বলেছি কোন ফিটনেসবিহীন গাড়িকে গ্যাস না দেওয়ার জন্য। পাশেই বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের একটি প্যাড রয়েছে ঘটনাটি আরও বড় হতে পারতো। তাৎক্ষনিকভাবে জালালাবাদ গ্যাসের ডিআরএস সেন্টার সংযোগ মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়া হয় ফলে অগ্নিকান্ড আর বড় হয়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff