ঠিকাদার-প্রকৌশলী সিন্ডিকেট, শাল্লায় বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

ঠিকাদার-প্রকৌশলী সিন্ডিকেট, শাল্লায় বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

এরচেয়ে ভাল বালু দেশে নাই। এসব দিয়েই সারাদেশ চলতেছে…..

পাবেল আহমেদ,শাল্লা
সুনামগঞ্জের শাল্লায় শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যায়ের ভবন নির্মাণ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই স্কুলে ১৬ কোটি টাকার ভবন নির্মাণে অনিয়মই এখন রিতিমতো নিয়ম । ঠিকাদার ও দায়িত্বরত প্রকৌশলীর সিন্ডিকেটেই এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে এত অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়া সত্ত্বেও একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করছেন প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলালও। এমন নীরবতার জন্য বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে দুলালকে। কেউ কেউ আবার বলেও ফেলেছেন ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে ভবন নির্মাণে এরকম অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন দুলাল। স্থানীয়রাও জানান, দায়িত্বরত প্রকৌশলীকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই ভবন নির্মাণে ঠিকাদার এই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ করে নিয়েছে।

এদিকে নির্মাণ কাজে সাইনবোর্ড না থাকায় তথ্য সংগ্রহে বিরাট ভোগান্তি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,২০২৪-২৫ অর্থ বছরে শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকার টেন্ডার পান বাসেত প্রকৌশলী লিমিটেড ও জাহানারা এন্টারপ্রাইজ নামের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এবং এই দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন নজরুল ইসলাম।

উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়টি। এই স্কুলে পড়াশোনা করে এলাকার অনেকেই এখন উচ্চ পর্যায়ে ও বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়টি সদরে উপস্থিত হওয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো সেখানকার স্থানীয়দের চোখে বেশি ধরা পড়ছে। তাই এই বিদ্যালয়ে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। কিন্তু প্রকাশ্যেই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে এত অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হলেও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্কুল কতৃপক্ষকে একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। অতি নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এর আগে গত ৫ মে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন এলাকাবাসী।

কিন্তু এবিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলাল নীরব ভূমিকা পালন করলেও, ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা (এ্যাডহক কমিটির) সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। তারপর কাজ বন্ধের পরের দিন সরেজমিনে আসেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান। তিনি সরাসরি এসেও ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন। তিনি অনিয়মের প্রতিবাদে উপস্থিত উত্তেজিত এলাকাবাসীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

গত ২ জুন আবারো নিম্ন মানের মাটি মিশ্রিত কালো দিয়ে ছাঁদ ডালাই করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিম্নমানের বালি, খোয়া, ইট ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। সিমেন্টের পরিমাণ কম ও বালির পরিমাণ বেশি দেয়া হয়েছে। কোন ধরনের পরিক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। যা এলাকাবাসীর নজরে আসলে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়। ওদিকে ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করায় সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ঠিকাদার নজরুল ইসলাম। এবং সাংবাদিকদের নিয়ে তিনি বাজে মন্তব্য করায় স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন ওই ঠিকাদার।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলালকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে গিয়েও স্কুলে তাকে উপস্থিত না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে ঠিকাদার নজরুল ইসলাম বলেন, এরচেয়ে ভাল বালু দেশে নাই। এসব দিয়েই সারাদেশ চলতেছে। বর্ডারে সরকার বালু আটকাইয়া দিছে। সরকার এগুলো অন্যায় করতাছে,এগুলো আপনারা লিখেন। সারা দেশ জুড়েই বালু নিয়ে সমস্যা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে, দায়িত্বরত প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হামিদ বলেন,আমি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ওইখানে যাইনি। এখন কি ধরনের বালু আনা হয়েছে তা দেখিনি। সরেজমিনে দেখে বলতে পারবো। বরাদ্দ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন কাগজ দেখে বলতে হবে।

পরবর্তীতে তিনি জানান বালুর এফ এম ঠিক আছে। কালো ও মাটি মিশ্রিত বালু টেস্ট করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা (এ্যাডহক) কমিটির সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন,স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ওখান থেকে কিছু বালুর সেম্পল নিয়ে আপনি কাউকে দিয়ে আমার অফিসে পাঠিয়ে দেন। আমি এটা ল্যাবরেটরিতে পাঠাবো।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff