স্টাফ রিপোর্টার
নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায় ভুয়া ওয়ারেন্টে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে ১২ দিন কারাভোগ শেষে জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক সেলিম হোসেন কাওছার। তিনি রোববার সিলেটের আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। ঘটনাটি জানাজানির পর সিলেটে এনিয়ে তোলপাড় চলছে। এমনকি সমালোচনা শিকার হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনও। এর প্রেক্ষিতে নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ভুক্তভোগী সাংবাদিক সেলিম আহমদ কাওছার দৈনিক সবুজ সিলেট’র স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণখেলি গ্রামের আওলাদ হোসেনের ছেলে।
কারোও ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে তাকে ফাঁসানো হয়েছে মনে করছেন অনেকে।
জানা যায়, নরসিংদী থানার নিষ্পত্তি হওয়া একটি মামলায় ইস্যু হওয়া ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হয়ে তিনি ১২দিন ধরে কারাভোগ করছেন। ১৯ জুন সিলেট মহানগরীর কদমতলীস্থ তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে র্যাব-৯ এর একটি দল তাকে আটক করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় সোপর্দ করে।পরবর্তীতে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ মামলা নং-১৫ ধারা ৩০২/৩৪ দ.বি এবং স্মারক নং- ১৯৮/(৫/৩/২৫) গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সেলিম আহমদ কাওছারের ছোট ভাই মাহবুব হোসেন বলেন, আমার ভাইকে গ্রেফতারের পর আমরাও মামলার নথি উত্তোলন করে মামলায় তার ভাইয়ের নাম নেই দেখতে পান। এছাড়াও ২০২৪ সালে আদালত কর্তৃক এই মামলাটি নিষ্পত্তি হয়। আমার নিরপরাধ ভাইকে ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে জেল খাটানোয় আমরা সামাজিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি। আমরা চাই প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
জানা গেছে, নরসিংদী অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম ম্যাজিস্ট্রেট এর স্বাক্ষর করা গত ২৮ এপ্রিল ইস্যুকৃত ওয়ারেন্টেটিতে উল্লেখ করা হয় যে, সেশন মামলা নং-৫৩৫/১২,রায়পুরা থানার মামলা নং ১০(৮)১১, ধারা -৩০২/৩৪দ.বি, (সিডিএমএস সম্পন্ন), আদালতের স্মারক -৫২৩/২৫ (তারিখ-১৫-৬-২৫), নরসিংদী পুলিশ সুপারের ১৫-৪-২৫ ইংরেজী তারিখে স্বাক্ষরিত। যার স্মারক নং-১৯৮৪ উল্লেখিত ওয়ারেন্টে টি তামিল করার লক্ষ্যে এবছরের ১০ এপ্রিল নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গ্রহণ করা হয়।
যা পরবর্তীতে ওয়ারেন্ট তামিলের উদ্দেশ্যে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার বরাবর প্রেরণ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে উক্ত ওয়ারেন্টটি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাপগঞ্জ বরাবর প্রেরণ করা হয়। যার ফলে ১৯ জুন র্যাব-৯ এর একটি দল সিলেটের কদমতলিস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সেলিম আহমদ কাওছারকে গ্রেফতার করে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে, তা নয়। পুলিশের (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) অপরাধীর তথ্য সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সফটওয়ারেও কাওছারের নামা আসামি হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
তাই এই ঘটনার সাথে নরসিংদীর রায়পুরা থানার সিএসআই, জিআরও, (সিডিএমএসের) দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। যদিও কেউ স্বাক্ষর জালিয়াতি করে, কিন্তু অফিসিয়ালি অন্য কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর করেও প্রেরণ করা হয়। বিগত কয়েক বছর আগে নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় পুলিশের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমেও অপরাধী হিসেবে সেলিম আহমেদ কাওছারে নাম অর্ন্তভুক্ত করা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সহযোগীতা ছাড়া সম্ভব নয়. মনে করা হচ্ছে। আর এই জালিয়াতচক্র নরসিংদী থেকে অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায় প্রায় ১৫ বছর আগের দায়ের হওয়া একটি মামলায় (নং ১৫(০৫)১০) ৫৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। উক্ত মামলাটি ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই নরসিংদীর অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালত শামীমা পারভিনের আদালতে নিষ্পত্তি হয়। যেখানে মামলায় অভিযুক্ত ৫৩ জন আাসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়। ওই অভিযুক্ত ৫৩ জনের তালিকায়ও সেলিম আহমদ কাওছারের নাম ছিলনা ।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল মাহমুদ জানান, ওয়ারেন্ট সাধারণত আদালত থেকে ইস্যু করা হয় । তাই কোন ওয়ারেন্ট আসল বা ভুয়া তা আমার পক্ষে বলা কঠিন। এ বিষয়টি শুধুমাত্র আদালত বলতে পারবে।
নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ভুয়া ওয়ারেন্টের বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে জানা যাবে এর সাথে কারা জড়িত।
সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার সম্রাট তালুকদার বলেন, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তিনি দ্রুত নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপারের সাথে অফিশিয়ালী যোগাযোগ করেন।
নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে তদন্ত করে নরসিংদী আদালত থেকে দায়েরকৃত ওয়ারেন্টটি ভুয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মো.মাহবুবুর রহমান বিষয়টি আদালত কে অবগত করেন। এরই প্রেক্ষিতে আদালত রোববার সেলিম আহমদ কাওছারের জামিন মঞ্জুর করেন।
Leave a Reply