সংস্কারকাজে আলোচনার চেয়ে খানাপিনা বেশি চলছে: সালাহউদ্দিন

সংস্কারকাজে আলোচনার চেয়ে খানাপিনা বেশি চলছে: সালাহউদ্দিন

একুশে সিলেট ডেস্ক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার কার্যক্রমে আলোচনার চেয়ে খানাপিনা বেশি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে পারবেন না বলে মত জানিয়েছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়া হলো। ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি বন্ধ করে দেওয়া হলো।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্যের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আপনারা এখানে সংস্কার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু হতাশা কেউ ব্যক্ত করছেন না। আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ। আলোচনা চলছে, তার চাইতে বেশি হয়তো খানাপিনা চলছে।

‘সংস্কারে সময় অনেক লাগছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা একটা জায়গায় ঐক্যে আসতে পারব। আমরা বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে পারবেন না। এখানেই স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়া হলো। এখানেই ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি বন্ধ করে দেওয়া হলো।’

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে, তাহলে স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কেবল নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে। বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে। আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে। তাহলেই থাকবে পরিপূর্ণ ভারসাম্য। এটা হলে কোনো অর্গানের ওপরে অতিরিক্ত অধিকার কেউ প্রয়োগ করতে পারবে না, হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা যদি আমরা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে তা গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সেই সংস্কার চাই, যেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মিত হবে। সেই সংস্কার আমরা চাই, যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার হবে, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে এবং যার ফলশ্রুতিতে জাতি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারবে। সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেই সমাজব্যবস্থা আমরা কামনা করি।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগকে বেশি নিয়ন্ত্রিত করার প্রচেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। নির্বাহী বিভাগের মধ্যে অতীতে একজন স্বৈরাচার তৈরি হয়েছিল। সে জন্য আমরা নির্বাহী বিভাগকে বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। সংসদীয় পদ্ধতিতে একজন স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সে জন্য আমরা আইনসভাকে বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না।

‘আমাদের চেষ্টা করতে হবে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং একটা সমন্বিত সহযোগিতা, একটা মধুর সম্পর্ক, একটা পাহারাদার সৃষ্টি করা; সেইফ গার্ড সৃষ্টি করার জন্য সব অর্গানকে শক্তিশালী করা; সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো, যাতে করে তারা নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাহলে আর কোনো দিন এ দেশে স্বৈরাচারের উৎপত্তি হবে না। আমরা ক্রমান্বয়ে সেদিকে যাচ্ছি।’

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি শুধু আপনাদের সবাইকে বলব, চোখ-কান খোলা রাখবেন। খরগোশের মতো কানগুলো যাতে সব সময় সতর্ক থাকে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff