এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলর ও সম্মেলন উপলক্ষে জমজমাট প্রচারণা চলছে। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুকে কাউন্সিলের তফশীল ঘোষনা নিয়ে বিএনপির ত্যাগী ও তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে পক্ষে বিপক্ষে প্রচারণা চলছে। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা ও উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আগামী ৯ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে এনিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চলছে। তবে তারিখটি নিয়ে একটি পক্ষ বলছে এই তারিখ সঠিক নয় ।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারন ও কাউন্সিলকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ৯ জুলাই কাউন্সিলের ব্যাপারে বৈধভাবে কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। তবে ফেসবুকে তফশীল ঘোষণা করা হয়। ফলে অনেকের কাউন্সিলে প্রার্থী হবার ইচ্ছা থাকলে অবগত না হওয়ায় ফরম সংগ্রহ করতে পারেন নি বলেও মৌখিক অভিযোগ করছেন।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দূ’ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা শেখ সুজাত মিয়া। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেফু। ইতিপূর্বে আহ্বায়ক কমিটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলকে গত ৩ নভেম্বর শনিবার হঠাৎ করে স্থগিত ঘোষনা করা হয়। এনিয়ে ৫ম বারে মতো কাউন্সিল ও সম্মেলন স্থগিত করা হয়। ফলে তৃর্ণমুলে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তখন বিএনপির কাউন্সিলকে সামনে রেখে দুটি পক্ষের প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চলে আসছিলো। বিএনপির দুটি বলয়ের ৫টি পদে নির্বাচনের জন্য ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন। এখন আবার নতুন করে ১৫ জন প্রার্থী প্রচরণা করছেন। কিছু পদে প্রার্থীদের পদ বদল হয়েছে। তাই আগের সিডিউল মোতাবেক নির্বাচন হলে পদ পরিবর্তন করতে হবে।
২০২২ সালের ৯ নভেম্বর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিলো। এনিয়ে একাধিক সভা করেও সমাধান করা যায়নি গ্রুপিং। দুটি বলয় থেকে তাদের প্রার্থীরা তাদের প্রতিটি পদের বিপরীতে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। সভাপতি প্রার্থী সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারার বিরুদ্ধে দলীয় কর্মসুচীতে অংশ নেই। তাই প্রার্থীতা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন ঐ সময়ে অপর দুই সভাপতি প্রার্থী সাবেক সাংসদ শেখ সুজাত মিয়া ও আব্দুল মোক্তাদির চৌধূরী। এনিয়ে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। বিএনপির কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট মুদ্দত আলী কাউন্সিল স্থগিত ঘোষনা করেন। আবারো দুইদিন ধরে ফেইসবুকে প্রচারণা চলছে আগামি ৯ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল। এনিয়ে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা ব্যাপক ভাবে চলছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই কাউন্সিল নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা রয়েছে।
উভয় গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মিটিং ও লবিং গ্রুপিং চলছে। এনিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে পাঁচটি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুন্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক।
জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি কাউন্সিল এর প্রার্থীরা ছিলেন সভাপতি পদে সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোক্তাদির চৌধুরী। সিনিয়র সহ সভাপতি পদে সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আশিক মিয়া ও বিএনপি নেতা মুশফিকুজ্জামান চৌধুরী নোমান। সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব আহমদ চৌধুরী, সাবেক যুবদল সভাপতি মজিদুর রহমান মজিদ ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ আহমদ।
এছাড়া যুন্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দেবপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি সভপতি এড. জালাল আহমদ ও গজনাইপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শফিউল আলম বজলু ।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সোহেল আহমদ চৌধুরী রিপন, নুরুল গনি চৌধুরী সোহেল, এডভোকেট শাহিদ আলী তালুকদার ,অলিউর রহমান অলি ও জামাল হোসেন প্রচার প্রচারণা করছেন।
একাধিক বার উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষনা করা হলেও বার বার কোন্দলের কারনে স্থগিত ঘোষনা করা হয়। এবার কাউন্সিল নিয়ে নানা শংকায় রয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ৬ষ্ঠ বারের মতো কাউন্সিল তারিখ ঘোষনা করা হয়েছৈ।
বিএনপি নেতা আব্দুর রকিব নামের একজন কাউন্সিলার বলেন বারবার তারিখ পরিবর্তন ও স্থগিত হওয়ায় আমরা তীব্র্র্র্র্র্র্র্র হতাশায় ভুগছি। আমরা মাঠের কর্মীরা চাই ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে চাই কিন্তু বার বার স্থগিত করা হচ্ছে। আমরা আমাদের পছন্দের নেতা নির্বাচনে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। এবারও আমরা চাই সঠিক সময়ে কাউন্সিল হউক।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা ৯ তারিখ সামনে রেখে প্রচার ও প্রচারণা করছি। আমরা আশাবাদী এবার উৎসব মুখর পরিবেশে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সভাপতি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল কোন জায়গায় হবে কোন নির্দিষ্ট স্থানের নামসহ তারিখ চুড়ান্ত হবে আগামীকাল (২৫ জুন) জেলা বিএনপির মিটিংয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, এবার কাউন্সিল নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে ।
নিয়ে অপর সভাপতি প্রার্থী- মতিউর রহমান পেয়ারা বলেন- সম্মেলনকে সামনে রেখে অজুহাতে সম্মেলনের তারিখ একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ে এইবার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের স্থানের বিষয়ে উপজেলা ও জেলা কমিটি বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট মুদ্দত আলী বলেন, কেন্দ্রীয় নেতবৃন্দ ও জেলা নেতৃবৃন্দ বসে আলোচনার ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনে আয়োজন করা হয়। আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেয়েছি আগামীকাল (২৫ জুন) জেলা বিএনপি বসে সম্মেলনের চুড়ান্ত তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করা হবে। আমরা আশাবাদী আগের সিডিউল ও তফসিল রেখে কাউন্সিল করা হবে।
Leave a Reply