সিলেট-১ (সদর ও মহানগর) আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে হলে অতীতের ন্যায় সন্ত্রাসী ও পেশাদার অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা জরুরি।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর ওপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে খন্দকার মুক্তাদির বলেন, এ ধরনের ঘটনা দেশের সকল রাজনৈতিক কর্মীর জন্য অশনিসংকেত।
তিনি বলেন, “অতীতে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করা হয়েছিল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে হলে সেই ধারা পুনরায় চালু করা জরুরি।”
খন্দকার মুক্তাদির বলেন, বিগত দেড় দশকে দেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। দিনের ভোট রাতে হওয়ার মতো নজিরবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এবার জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। এই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
বিএনপির নীতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিএনপি সবসময় আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। অতীতে বিএনপির শাসনামলে কেউ দলীয় পরিচয়ে অপরাধ করে পার পায়নি। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসের কোনো স্থান থাকবে না।”
জনাকীর্ণ মতবিনিময় সভায় খন্দকার মুক্তাদির নির্বাচিত হলে তার উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বদর।
সিলেটের অর্থনৈতিক দুর্বলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের অভাবে সিলেটের তরুণরা বিদেশমুখী হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সরকারি নীতিসহায়তায় নতুন শিল্প স্থাপন, তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে জোর দেওয়া হবে।
কৃষি খাতের উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় খাল খনন ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু বিগত সময়ে সে ধারা অব্যাহত রাখা হয়নি। ভবিষ্যতে সিলেটের কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নগর সমস্যার প্রসঙ্গে খন্দকার মুক্তাদির বলেন, কসমেটিক উন্নয়ন নয়—জলাবদ্ধতা, নদীভাঙনসহ নগর সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে। সুরমা নদীর দুই তীর সংরক্ষণ করে নগর রক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মাদক ও অনলাইন জুয়াকে চিরতরে নির্মূল করে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা ও কর্মমুখী করে গড়ে তোলা হবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সকল আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের জন্য বিমানবন্দর উন্মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনরা।
Leave a Reply