একুশে সিলেট ডেস্ক
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনকে ঘিরে বিএনপির ভেতরে বাড়ছে উত্তেজনা ও বিরোধ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রার্থীতা ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। এতে করে বিএনপির এ আসনের ভোটব্যাংক ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশেষ করে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এবং দুই দফার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরীর অনুসারীরা আরিফুল হককে ‘বহিরাগত প্রার্থী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে মাঠে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাদের দাবি এলাকার মানুষ নিজের প্রার্থী চায়, বহিরাগত স্থান নাই।
গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাত থেকে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল হয়। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের একাধিক স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিলে সাবেক মেয়র আরিফকে সিলেট-৪ আসনের জন্য অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন আব্দুল হাকিম সমর্থিত ব্যক্তিরা। শুক্রবার রাতে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের অন্তত ১৩টি স্থানে এসব মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট নগরভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু সিলেট-৪ আসনে তার সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল। তাদের আশঙ্কা, বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হলে স্থানীয়ভাবে বিএনপির ভোটব্যাংক ভেঙে পড়তে পারে। এছাড়া আরিফুল হকের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত এলাকার পাথর কাণ্ড থেকে শুরু করে বালু লুটপাটের অতীত অভিযোগগুলো সামনে নিয়ে আসছেন তারা।
আরিফুল হকের বিরুদ্ধে আব্দুল হাকিম চৌধুরী সমর্থন করা আতিক হাসান বলেন, সিলেট-৪ আসনের মানুষ যদি কোন একক ব্যক্তির জন্য হরতাল পালন করেছিল সেটা ছিল আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি তার যৌবনে ছিলেন এ এলাকার চিহ্নিত একজন দুর্নীতিবাজ। তাছাড়া উনার বাড়ি মৌলভীবাজার, হয়েছেন সিলেট নগরের মেয়র এখন চাচ্ছেন সিলেট-৪ আসন এগুলো মানে কি, সিলেট-৪ আসন কি ওই এলাকার মানুষের, না বহিরাগতদের জন্য।
এদিকে বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তা মেনে নেওয়া হবে। তবে বাইরে থেকে কাউকে এনে দিলে কর্মীদের মধ্যে ভাঙন তৈরি হতে পারে। ভোটাররা চায় এলাকার পরিচিত মুখ।
একই সুরে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেন, আমি স্থানীয় প্রার্থী, জনগণের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা প্রচার চালাব।
অন্যদিকে, আরিফুল হক চৌধুরী দাবি করেছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই তিনি সিলেট-৪ আসনে কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আমি এতো কাঁচা লোক না যে এমনি এমনি আসব, আমার কয়েকটি শর্ত ছিল যা তারেক রহমান মেনে নিয়েছেন সেই কারণে আমি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করছি। আমি এ আসনের সমস্যা গুলা জানি এবং আমি এগুলো নিয়ে কাজ করব।
গেল ৬ নভেম্বর রাতে ঢাকা থেকে সিলেটে ফেরার পরদিন তিনি গোয়াইনঘাটের রাধানগর বাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে প্রয়াত এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেন।
যদিও বিএনপি এখনো সিলেট-৪ আসনে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণা করেনি, তবে আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি ‘চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র’ পেয়েছেন। ফলে তার সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। তারা বলছেন, “আরিফুল হক উন্নয়নের রাজনীতির ধারক, এম. সাইফুর রহমানের হাতেই রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন।
অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান জানান, তিনি কারোর মুখের কথায় বিশ্বাসী না, দল যদি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় তখনই এটি মানতে পারব।
এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা—কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও প্রয়াত এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক নেতাকর্মী জানান, এই আসনে অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বিতর্ক পাশ কাটিয়ে তাঁর কর্মী সমর্থক ও শ্রমিক সংগঠনসহ তৃনমূল বিএনপি ও অংঙ্গ-সংঘঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ৩ উপজেলায় তারেক রহমানের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ, মিছিল ও সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, এই আসনে মনোনয়ন ঘিরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব না মেটাতে পারলে নির্বাচনে বিএনপির জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ আসন হয়ে উঠতে পারে। আরিফের বিরুদ্ধে সতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়াতে পারে।
Leave a Reply