একুশে সিলেট ডেস্ক
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর অন্তর্বর্তী সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মধ্য নভেম্বরে শেষ হচ্ছে নতুন দলের নিবন্ধন। আর এই মাসেই চালু হবে পোস্টাল ব্যালটের ভোটিং নিবন্ধন অ্যাপ। বছরের শুরুতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে যে এক গুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা ধরে এগিয়েছে ইসি, তা প্রায় শেষ ধাপে পৌঁছে যাচ্ছে। এখন অপেক্ষা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের। পরে ব্যাপকভাবে প্রচারণায় নামবে ইসি। এখন অপেক্ষা তফসিল ঘোষণার।
গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। এ আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে পরদিন সরকার প্রধানের দপ্তর চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।
এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ইসি জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। ভোটার তালিকা, সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র, নতুন দল নিবন্ধন (চূড়ান্ত ধাপে), পর্যবেক্ষক সংস্থা (চূড়ান্ত ধাপে), আইন সংস্কার, পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি, প্রশিক্ষণসহ প্রধান কাজগুলো শেষ হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, দলগুলোর নিবন্ধনও দেওয়া হয়েছে। সবশেষ আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, এখন দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা প্রস্তুত রয়েছে। শিগগির তা জারি হবে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ ধাপে রয়েছে।
ভোট সামনে রেখে ইসির কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সূচির তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা গেছে—
বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ: দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে থেকে শুরু করে এক দেড় মাসে শেষ করার কথা। কিন্তু দলের সঙ্গে সংলাপ এখনো শুরু হয়নি।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ: ২ মার্চ ও ৩১ আগস্ট দুই ধাপে ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত। তৃতীয় হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৮ নভেম্বর।
নির্বাচনী আইন-বিধি: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ কর্মপরিকল্পনা থেকে দুই মাস পরে ৩ নভেম্বর জারি করা হয়েছে। এর আলোকে আচরণবিধি জারি হবে দুয়েক দিনের মধ্যে।
এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত; দেশি, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতামালা চূড়ান্ত করা; নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) আইন ২০২৫; নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ সংশোধন অধ্যাদেশ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করেছে।
প্রশিক্ষণ: ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন: প্রাথমিক নিবন্ধন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারির কথা থাকলেও মধ্য নভেম্বরে শেষ হবে।
সীমানা নির্ধারণ: ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ হয়েছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন: মধ্য অক্টোবরে শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় বিলম্বিত হয়, নভেম্বরের মাঝামাঝি শেষ করার কথা রয়েছে।
পোস্টাল ভোটিং ও ব্যালট: প্রকল্প অনুমোদন, সফটওয়্যার চূড়ান্ত, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, নিবন্ধন ও প্র্যাক্টিসিং মডিউল, প্রচারের কাজ অক্টোবরের মধ্যে গুছিয়ে এনেছে। ১৬ নভেম্বর অ্যাপ উদ্বোধন হবে। প্রবাসে নভেম্বরের মধ্যেই ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। ভোটের দুই সপ্তাহ আগে কারাবন্দিদের জন্য ব্যালট পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা:
অক্টোবরে প্রথম আইনশৃঙ্খলা সভা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে এবং তফসিল ঘোষণার পর আবার বৈঠক করার কথা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আজ আমরা ৬৬টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত অনুমোদন করেছি। চিঠি দেওয়া হবে। আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ ধরে আচরণ বিধিমালার গেজেট করার জন্য পাঠিয়েছি। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসার ওয়ার্কপ্ল্যান চূড়ান্ত। বলা যায়, সার্বিক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছি আমরা। নভেম্বরের মাঝামাঝি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
টাইমলাইনে দু’তিন ‘কদম’ পিছিয়ে:
কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে গত বুধবার (৫ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এগিয়ে গেছি। তবে দু-তিনটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনার সম্ভাব্য বাস্তবায়নসূচি থেকে পিছিয়ে রয়েছি। একটি হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন। অপরটি হলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ। তবে দল নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের সময় নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়ানোকে ‘যৌক্তিক’ মনে করেন তিনি।
ইসি সচিব বলেন, আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ পেয়েছি ৩ নভেম্বর। আরপিও ও আচরণবিধি ছাড়া সংলাপ করে লাভ নেই। তাই দলের সংলাপ করতে বিলম্ব। আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে শুরু করবো আশা করি। এটা ছাড়া আর সবকিছু অনটাইমে আছে। ভোটপ্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ শেষের বিষয়টি শতাংশে উল্লেখ না করে তফসিলের আগের কাজগুলো ‘সন্তোষজনক পর্যায়ে’ গুছিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান আখতার আহমেদ।
ইসি সচিব আখতার বলেন, এরই মধ্যে নিবন্ধন অ্যাপ চালু, আইন মেনে ম্যানুয়েল তৈরি, মুদ্রণ, ভোটার তালিকা মুদ্রণসহ ধারাবাহিক অন্যান্য কাজ চলবে। ভোটের ক্ষণগণনা শুরু ও ইসির কর্তৃত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিধি বিবেচনা করে ফের ‘চেকলিস্ট’ তৈরি করবে ইসি সচিবালয়। তফসিলের পরের কাজগুলো আরও গতি পাবে।
গণভোট প্রসঙ্গ:
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার অভিযান শুরু করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ প্রচার অভিযানের প্রথম টিজারে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ২ নভেম্বর প্রচারিত ভিডিওতে বলা হয়, নির্বাচন ২০২৬, দেশের চাবি আপনার হাতে। আপনার ভোটটি আপনি দিয়ে নির্ধারণ করুন কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান।
ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচনের আগে বা সংসদ নির্বাচনের দিন একসঙ্গে গণভোট করার সুপারিশ রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোট কবে তা নিয়ে দলগুলোর বিতর্কের মধ্যে ‘ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনার’ জন্য সরকারের তরফ থেকে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার সময় দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি (গণভোট) যেহেতু সরকার আলোচনার মধ্যে রেখেছে, সরকারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। এখন নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি আসেনি। সরকারের নির্দেশ পেলে সে অনুযায়ী বাস্তবায়নের কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন।
Leave a Reply