এম.এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ:
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তীব্র যানজট এখন জনদুর্ভোগের অন্যতম চিত্রে পরিণত হয়েছে। সেই যানজট পরিদর্শনে এসে নিজেই বিপাকে পড়লেন সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে মহাসড়কের আশুগঞ্জ অংশে তিনি তিন ঘণ্টা আটকে থাকেন। ফলে নির্ধারিত হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জ অংশে পৌঁছাতে পারেননি তিনি।
দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকায় গত ৪ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর নড়ে চড়ে বসে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়। পরিদর্শনের অংশ হিসেবেই বুধবার তিনি ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসে ভৈরব এসে, পরে সড়কপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পৌঁছান। সকাল সোয়া ১০টার দিকে আশুগঞ্জ হোটেল উজানভাটি থেকে গাড়িবহর নিয়ে মহাসড়ক পরিদর্শনে বের হন তিনি।
কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে পৌঁছেই পড়েন ভয়াবহ যানজটে। প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড়ে পৌঁছে নাজুক মহাসড়কটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, “ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুরবস্থা নিরসনে ইতোমধ্যে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ১২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডে অস্থায়ী কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কেউ দায়িত্বে গাফিলতি করলে বা অফিসে অনুপস্থিত থাকলে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “যানজটের প্রধান কারণ ট্রাফিক বিভাগের গাফিলতি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকেই মহাসড়কের অস্থায়ী সংস্কার কাজ চলছে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় কয়েকস্তরে ইট-বালু বিছানো হয়েছে। সংবাদপত্রে বিষয়টি প্রকাশের পরই দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
মহাসড়কের আশুগঞ্জ, বিশ্বরোড গোলচত্বর, শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় বড় গর্ত ও ডাইভারশন না থাকায় যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে যানবাহন, ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও চালকেরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহ শামীম আলম জানান, “শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। গতকালও মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা ছিল অর্ধেকেরও কম।”
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, “আজকে আমাদের এলাকায় কোনো যানজট নেই। উপদেষ্টা আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেননি।”
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, “উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান পরিদর্শনে আসবেন শুনে আমরা কাজের গতি বাড়িয়েছি। সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
তবে দীর্ঘ সাতদিনেরও বেশি সময় ধরে চলমান যানজটে মহাসড়কপথে হাজারো যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যানজট নিরসনে প্রশাসনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
Leave a Reply