শাবি প্রতিনিধি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চালুতে একমত হয়েছে ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলো। তবে রাজনীতি চালুর ফরমেট নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে সংগঠনগুলোর মধ্যে। কেউ কেউ ক্যাম্পাসের সব জায়গায় রাজনৈতিক কার্যক্রম চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ সংগঠন ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালুর পক্ষে থাকলেও হলগুলো যেন রাজনীতিমুক্ত থাকে সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
হলে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বিগত সময়ে হলে সিট বাণিজ্য, দখলদারিত্ব ও গেস্টরুম কালচারসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালু ছিল। এসব কর্মকান্ডের ফল ভোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। নষ্ট হয়েছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ। এখন শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিকভাবে আগের তুলনায় অধিক সচেতন। এসব অপকর্ম বন্ধ করতে হলে হলগুলোতে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখতে হবে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. এছাক মিয়ার নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়ে আয়োজিত সভায় এসব বিষয় তুলে ধরেন প্রতিনিধিরা। এসময় প্রক্টরিয়াল বডি ও বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাসূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসের সর্বত্র রাজনৈতিক কার্যক্রম চালু চেয়েছে ছাত্রদল। তবে শিবিরসহ অন্যান্য দলগুলো হলে রাজনীতির বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে। হলে রাজনীতি চালুর বিষয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে ছাত্রশিবির। এছাড়া বাকি সংগঠনগুলো হলে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
সভায় যোগ দিয়েছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মজলিস ও বৈছাআর সাবেক নেতারা। স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে বৈঠকে বসবে না এমন অভিযোগ এনে সভা বর্জন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রমৈত্রীর সংগঠকরা।
শাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাইম সরকার বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই আমরা প্রতিবাদ করে আসছি। রাজনীতি চালুর বিষয়ে প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে এবং ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ছাত্ররাজনীতি চালু থাকতে হবে। ক্যাম্পাসে হলে ও একাডেমিক ভবনে ছাত্রদের বিচরণ রয়েছে। তাই ক্যাম্পাসে এবং হলে সর্বত্র রাজনৈতিক কার্যক্রম চালু করতে হবে।
শাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাসুদ রানা তুহিন বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালু হতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই গঠনমূলক, আদর্শভিত্তিক ও কল্যাণমূলক হতে হবে। ছাত্ররাজনীতির জন্য একটি মডেল তৈরি করতে হবে। সব রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো কাজ করবে। রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ের কন্ঠস্বর হবে। হলে রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন,এ বিষয়ে হলের শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া যেতে পারে। বিগত সময়ে হলগুলোতে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর জন্য পৃথক রুম ছিল। হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জোর করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করানো, সিট বাণিজ্য ও দখলদারিত্বের রাজনীতি কায়েম ছিল। এ ধরনের রাজনীতি আমরা চাই না। হল শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ থাকবে। জোর করে কাউকে রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করানো যাবে না। রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ হলে থাকবে না, হলে থাকবে শিক্ষার্থী পরিচয়ে। পাশাপাশি, হল প্রশাসনকে পক্ষপাতহীন ও নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করতে হবে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন শাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আজাদ শিকদার বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালুর পক্ষে আছি। তবে হলে রাজনীতি সক্রিয় হোক সেটার পক্ষে না। হলে রাজনীতি চালু থাকলে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়। দখলদারিত্ব ও সিট বাণিজ্যের রাজনীতি শুরু হয়। তাই হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা উচিত। এছাড়া ছাত্ররাজনীতি হবে শিক্ষকদের প্রভাবমুক্ত এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে কাজ করতে হবে।
ইসলামী ছাত্র মজলিস শাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ আহমদ বলেন, আমরা চাই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু হোক। তবে হলে রাজনীতি চালুর বিষয়ে আমরা একমত নয়। বিগত সময়ে হলে রাজনীতির কুফল সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত আছি। সেসব বিষয় বিবেচনায় হলে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ রাখতে হবে। এছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর উপর যেন রাজনৈতিক কর্মকান্ড জোর করে চাপিয়ে দেওয়া না হয় সে বিষয়ে আমরা অভিমত ব্যক্ত করেছি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. এছাক মিয়া বলেন, আমরা সকল রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে মিটিং করেছি। তারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালু ও শাকসু নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। আমরা এগুলো নোট করেছি। প্রশাসনের সাথে আলাপ করে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Leave a Reply