একুশে সিলেট ডেস্ক
হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অলাভজনক আরও তিনটি স্থলবন্দর বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এসব বন্দরে কোনো আমদানি-রপ্তানি বা ইমিগ্রেশন কার্যক্রম না থাকায় এবং অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন যে তিনটি বন্দর বন্ধ হবে, সেগুলো হলো—নীলফামারীর চিলাহাটি, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ ও রাঙামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর। এছাড়া ভারতীয় অংশে অবকাঠামো না থাকায় হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।
চলতি বছরের ২৮ জুলাই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পরিকল্পনা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারকোট এলাকায় অবস্থিত বাল্লা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের পাহাড়মুড়া (খোয়াই) এলসিএস রয়েছে।
২০১৬ সালের ২৩ মার্চ বাল্লা শুল্কস্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৪৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় অংশে অবকাঠামো ও সংযোগ সড়ক না থাকায় নতুন স্থানে বন্দরটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। যদিও বাল্লা শুল্কস্টেশনের বিপরীতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের শুল্কস্টেশন ও ইমিগ্রেশন চালু রয়েছে।
বর্তমানে নবনির্মিত স্থানে স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু না হলেও পুরনো বাল্লা শুল্কস্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি চলছে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে হবিগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত -বাংলাদেশ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ একর জমির ওপর ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরজমিন পরিদর্শন করে নির্মাণকাজ শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। প্রাথমিকভাবে ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় অবকাঠামো নির্মাণে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর বন্দর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আশা করা হয়েছিল উভয় দেশের নির্মাণকাজ সমানভাবে এগিয়ে গেলে ২০২৪ সালের মধ্যেই বন্দর চালু হবে। কিন্তু স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা সরকার প্রহরমুড়া এলাকায় এখনো বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে। এসব বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি পরিদর্শন শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জমা দেয়।
এ বছরের ২২ জুন অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখ স্থলবন্দর বন্ধ ঘোষণা এবং বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। ওই সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে মতামতসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখ স্থলবন্দরে বর্তমানে কোনো আমদানি-রপ্তানি বা ইমিগ্রেশন কার্যক্রম নেই। এসব বন্দরে জমি বা অবকাঠামোও নেই। ভবিষ্যতেও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা না থাকায় অলাভজনক বিনিয়োগ এড়াতে এগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও ভারতীয় অংশে (পাহাড়মুড়া) অবকাঠামো না থাকায় কার্যক্রম চালু সম্ভব হয়নি। এ কারণে ভারতীয় অংশের উন্নয়ন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বন্দরটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি বাল্লা বন্দরের অবকাঠামো বিকল্পভাবে ব্যবহারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, অন্যান্য অলাভজনক স্থলবন্দরে যেন অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply