এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ
হবিগঞ্জ জেলায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ সুপার “জিরো টলারেন্স” নীতি গ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে অপরাধ দমন এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বদ্ধপরিকর।
নবীগঞ্জে স্বরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষ, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ডাবল মার্ডারের ঘটনায় উত্তপ্ত নবীগঞ্জকে সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে জিরো টলারেন্স পদক্ষেপ গ্রহন করে প্রশংসায় ভাসছেন হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা । ফলে অশান্ত নবীগঞ্জসহ জেলাজুড়ে শান্তি শৃংখলা ফিরে এসেছে। জন-জীবনে ফিরেছে স্বস্থির নিঃস্বাস ।
নবীগঞ্জে ডাবল মার্ডার হয়েছে দুজন গণমাধ্যমকর্মীর বিরোধ কেন্দ্র করে ।
পরে তা এলাকাভিত্তিক দুই সম্প্রদায়ের গোষ্টিগত দ্বন্দ্বের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল । ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জড়ানো এ সংঘাতে প্রাণ হারান ২জন, আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। সংঘর্ষকালে শহরে ৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এখন পর্যন্ত উক্ত ঘটনাটি কেন্দ্র করে ৫টি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬জন সাংবাদিক।এছাড়াও ১০ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে এসব মামলায়।
উক্ত ঘটনাটি আপোষ-মীমাংসা করার জন্য প্রশাসনের পক্ষে থেকে একটি সালিশ কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি দুই দফায় মিটিং করে বিচার কাঠামো ঠিক কওরন শালিসব্যাক্তিগণ । উভয় পক্ষ সালিশি প্রক্রিয়া মেনে নেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন বলে সূত্রে জানা যায়।
আতংকিত নবীগঞ্জের মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ব্যবসা বানিজ্যসহ তাদের কর্মস্থলে ফিরে কাজ করছেন। সব কিছু এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই দুই সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশা ও সেলিম তালুকদারের ব্যক্তিগত বিরোধ ও মারধোরকে কেন্দ্র করে নবীগঞ্জ শহরে দু গ্রাম আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দু পক্ষের দুই জন নিহত এবং প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হসপিটালসহ অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ২০ কোটি টাকারও উপরে। নবীগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের ৭/৮টি গ্রাম পুরুষশুন্য হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় মোট ৫টি মামলা দায়ের করা হয়।
এরমধ্যে পুলিশ সুপারের নির্দেশে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি প্রথম দায়ের করেন। ওই মামলা দায়েরের পরপরই শালিসি প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং শহরের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠে। পুলিশ ধরপাকড় বাদ দিয়ে সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি ফিরে আনার জন্য শালিসি প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দেন।
এক পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় একটি শক্তিশালী শালিস বোর্ড। গতকাল বুধবার সালিশি বোর্ড তাদের দ্বিতীয় বৈঠকে বিচারে কাটামো গঠন করেছেন। শিগরিই সালিশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
নবীগঞ্জ সালিশ কমিটির উপদেষ্টা সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল মোঃ শাহজাহান আলী বলেন, আমরা বিষয়টি সালিশির মাধ্যমে শেষ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। আমরা এতো বড় বিষয়টি সমাধান করতে প্রশাসনের সকল ধরনের সার্পোট প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি সমাধানে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারসহ নবীগঞ্জ প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমানে সালিশির মাধ্যমে নবীগঞ্জে সম্প্রীতি ফিরে আসবে, উভয় পক্ষকে একটি কাটামোর ভিতর নিয়ে আসা হবে।
হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান বলেন, আমরা নবীগঞ্জের ধাঙ্গা দমনে এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা গ্রহন করেছি। অপরাধী যেই হউক তার ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছি। কে কোন দল কোন সংগঠনের সেটা না দেখে আমরা দেখবো যাতে কোন নিরপরাধ মানুষ এই ঘটনায় হয়রানির শিকার না হন।
ভুল তথ্য দিয়ে নিরপরাধ মানুষের হয়রানি যারা করতে চায় তাদেরকে সর্তক থাকতে হবে। এলাকার সালিশ প্রক্রিয়া হলে আইনের ভিতরে সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply