সেই শিক্ষক মাহরিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি

সেই শিক্ষক মাহরিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি

একুশে সিলেট ডেস্ক
নীলফামারীতে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত স্কুলশিক্ষক মাহরিন চৌধুরী (৪২)। জানা গেছে, শিক্ষক মাহরিন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তিনি জিয়াউর রহমানের আপন খালাতো ভাই এমআর চৌধুরীর মেয়ে।

‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার (২১ জুলাই) বিমান বিধ্বস্তের পর আগুনের মধ্যে ক্লাসরুমের ভেতর থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের একে একে বাইরে নিয়ে আসেন মাহরিন চৌধুরী। প্রায় ২০ শিক্ষার্থীকে বাইরে বের করে আনতে পারলেও নিজে সময়মতো বের হতে পারেননি। মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন তিনি।

এ ঘটনায় উদ্ধার করে তাকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান। তার শরীরের ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল বলে জানান চিকিৎসক।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে স্বামী মনছুর হেলালের সঙ্গে কথা বলেন এই সাহসী শিক্ষিকা।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে মনছুর হেলাল বলেন, ‘বাচ্চারা যেদিক দিয়ে বের হবে, ওখানে সরাসরি এসে বিমানটি ক্রাশ করছে, তারপরে এক্সপ্লোশন হয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। ঘটনার পর মাহরিন কিছু বাচ্চাকে বের করে নিয়ে আসে।’

আইসিউতে মাহরিনের শেষ কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইসিইউতে আমি তাকে বললাম, তুমি কেন এ কাজ করতে গেলা? সে বলল, আমার বাচ্চারা আমার সামনে সব পুড়ে মারা যাচ্ছে, আমি এটা কীভাবে সহ্য করি। ও (মাহরীন) সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, কিছু বাচ্চা বের করছে, আরও কিছু বাচ্চা বের করার চেষ্টায় ছিল। ঠিক এমন সময় বিকট শব্দে আরেকটি বিস্ফোরণ হয়। আর তাতেই তার পুরো শরীর পুড়ে যায়।’

মনছুর হেলাল বলেন, ‘লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে আমাকে আগে বলল, আমার ডান হাতটা শক্ত করে ধরো। হাত ধরা যায় না, সব পুড়ে শেষ। ও বলল, তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না।’

স্বামীর হাত ধরে মাহরীন তখন বলছিলেন, ‘আমার বাচ্চাদের দেখো।’ জবাবে মনছুর হেলাল বলেন, ‘তোমার বাচ্চাদের এতিম করে গেলা। জবাবে সে বলে, কী করব, ওরাও তো আমার বাচ্চা, সবাই পুড়ে মারা যাচ্ছে, আমি কীভাবে সহ্য করব?’

মনসুর হেলাল আরও বলেন, ওকে বাঁচাতে পারিনি। আমার দুটি ছোট ছোট বাচ্চা এতিম হয়ে গেল।

মাহরিন চৌধুরীর বাবার বাড়ি নীলফামারী জলঢাকা উপজেলা বগুলাগাড়ী চৌধুরীপাড়ায়। মহিতুর রহমান চৌধুরী ও সাবেরা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে ২০০২-০৩ সালের দিকে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত হন মাহরিন চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পযন্ত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মিডিয়াম শাখার তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কো-অর্ডিনেটর ছিলেন।

তার শ্বশুরবাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চরআত্রাই গ্রামে। স্বামী মনছুর হেলাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার। বৈবাহিক জীবনে দুই ছেলে সন্তান আয়ান রশীদ ও আদেল রশীদের মা ছিলেন মাহরিন। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। জিয়াউর রহমানের মা জাহানারা বেগম এবং মাহরিন চৌধুরীর দাদি রওশনারা বেগম ছিলেন আপন বোন।

জলঢাকার বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মহুবার রহমান বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মাহরিন চৌধুরী কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। গত ২২ জুন তিনি প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন। প্রতিদিনই তিনি একবার করে হলেও ফোনে আমার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক সমাবেশ আহ্বান করা নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে সবশেষ কথা হয়। এরপর খবর পাই তিনি বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন এবং রাতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষক ও একজন মা হিসেবে মাহরিন নিজের জীবনবাজি রেখে অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচিয়ে আজ না ফেরার দেশে। তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা পুরো জাতি মনে রাখবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff