১৯৬৬ সালের ভাঙারি প্লেন দিয়ে আর কতজন মরলে এ রাষ্ট্র জাগবে?

১৯৬৬ সালের ভাঙারি প্লেন দিয়ে আর কতজন মরলে এ রাষ্ট্র জাগবে?

একুশে সিলেট ডেস্ক

প্রশিক্ষণে বহু বছরের পুরোনো বিমান ব্যবহার করায় নিজের ক্ষোভ ঝাড়লেন বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ।

২১ জুলাই (সোমবার) গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এতে তিনি লেখেন, ২০২৪ সালের ৯ মে একজন বীর পাইলট, স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ, প্রশিক্ষণ মিশনের সময় একটি যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ বিমানে প্রাণ হারান। শেষ মুহূর্তে তিনি নিজেকে না বাঁচিয়ে জনবহুল এলাকা থেকে বিমানের গতি ঘুরিয়ে দেন। বেঁচে যায় বহু প্রাণ। আজ আবার একই দৃশ্য। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাওকির ইসলাম সাগরও প্রাণ হারালেন অন্য একটি যান্ত্রিকভাবে ব্যর্থ বিমানে। ভিন্ন নাম, ভিন্ন তারিখ, কিন্তু গল্পটা একই। একজন দক্ষ, সাহসী, ব্রিলিয়ান্ট পাইলট আর ফিরে এলেন না।

তিনি লেখেন, প্রশ্ন উঠছে- ১৯৬৬ সালের চাইনিজ রেপ্লিকা বিমান দিয়ে কি আমরা এখনো পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেব? প্রতিটি প্রশিক্ষণ যদি হয় মৃত্যুর জুয়া, তবে এটা কি কেবল দুর্ঘটনা, না রাষ্ট্রীয় অবহেলা?

বিবৃতিতে আরও লেখেন, এটা কি কেবল যান্ত্রিক ত্রুটি? নাকি বাজেট প্রণয়ন ও বরাদ্দে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের দায়? নাকি প্রতিবার ক্যামেরার সামনে গিয়ে কিছু সহানুভূতিপূর্ণ কথা বলেই দায় সেরে ফেলার সংস্কৃতি?

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আকাশে এখনো উড়ছে সত্তর দশকের প্লেন। যেগুলো আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে অচল তো বটেই, প্রশিক্ষণেও অযোগ্য। বিশ্বের অনেক দেশ এসব বিমান ২০-৩০ বছর আগেই রিসাইক্লিং কারখানায় পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা? আমরা এখনো আমাদের প্রতিভাবান, অনুপ্রাণিত, উদ্যমী তরুণ পাইলটদের হাতে তুলে দিচ্ছি সেই ভাঙারি প্লেন। এর নাম উন্নয়ন নয়। এর নাম আত্মঘাতী অবহেলা।

বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টির এই নেতা লেখেন, একজন পাইলট তৈরি করতে লাগে কোটি কোটি টাকা, বছর বছর সময়, শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা এবং জাতির সেরা মেধা। আর আপনি সেই প্রাণটা ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন স্রেফ বাজেটের কারসাজি আর দায় এড়ানোর সংস্কৃতির কারণে? এই মৃত্যুর দায় কোনো ‘মেইনটেন্যান্স টিম’ বা ‘মরিচা ধরা যন্ত্রাংশের’ নয়। এই দায় সেসব মানুষের, যারা সিদ্ধান্ত নেন, বরাদ্দ দেন, তদারকি করেন আর প্রতিবার চুপ থাকেন।

আমরা জানি, আজও আপনারা হাসপাতালে যাবেন। কিছু সহানুভূতি জানাবেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলবেন ‘ব্যথিত’, ‘গভীরভাবে শোকাহত’, পরিবারকে সামান্য অনুদান দেওয়া হবে। তারপর? সব আগের মতো চলবে। আরও একটি টেন্ডার হবে, পুরোনো প্লেন কেনার নামে আরও কিছু জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এই যে ‘প্রশিক্ষণ’ চালিয়ে যাওয়া, এই যে ‘আধুনিকায়ন’ নামের প্রহসন সবই এক একটি পরিকল্পিত অবহেলার নামান্তর। এই মুহূর্তে আমাদের দরকার সত্যিকারের জবাবদিহি। প্রতিরক্ষা বাজেটের বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতার পূর্ণ অডিট। সবচেয়ে বড় কথা- প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রকৃত উন্নয়নে অবিলম্বে বিনিয়োগ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff