জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
উপজেলার ব্যস্ততম সাচনা বাজার। প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের যাতায়াত। এই নিত্য কর্মে সহজ দৃশ্যে এখন কোন কিছু আপনার চোখে পড়বেনা যা আপনার জীবিকা অনুসন্ধানের কারন হতে পারে। তবে জামালগঞ্জের সাচনা বাজারে কালিগাছের নিচে বসে থাকা দেবু রবি দাস তথা মুচিদের দৃষ্টি লেগে থাকে এই চলাফেরার মানুষগুলোর পদযুগলে। নষ্ট জুতা সুধরে তুলা বা রং করেই জীবন চলে তাদের। এখন আর আগের মতো রমরমা কাজ নেই এই পেশায়। মানুষ ছেড়া জুতো আর মেরামত করতে চায় না। যে কারনে দেবু রবিদাসদের পরিবারে সুদীন ফেরে না। এমনকি কোন মতে খেয়ে পরে বাচাঁর পথেও এসেছে দারুন ভাটা। দিনভর লোহার সুই আর সুতা ও কালী সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে থাকাই চলে। চলে না ব্যস্ত হাতের কর্মমুখর সঞ্চালন। অন্যের ছেড়া জুতা সেলাই আর কালী ও ব্রাশ দিয়ে পরিপাটি করে দিয়ে সংসারের চুলা জ্বালানো আর পেটের আগুন নেভানোর পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে মানুষের অভ্যাস।
দেবু রবি দাস ক্ষোভ নিয়ে বলেন মানুষ আর জুতা সেলাই করেনা। মনে হয় মানুষের পায়ের জুতা ছিড়ে না। ছিড়লেও আর পরেনা। নতুন জুতা কিনে পড়ে। বাপ-দাদার এই পেশায় আর জীবন চলেনা। আগে প্রতিবছর ঈদ পুজায় এলে ব্যস্ততা বেড়ে যেত। তবে এখনকার ঈদ ও পুজার চিত্র আলাদা। হাতে কাজ নেই বসে বসেই অলস সময় পার করছে তারা। সারাদিন যা উপার্জন হয় তাতে ঠিকমতো সংসার চলেনা। জামালগঞ্জে ৩০ থেকে ৫০ টি পরিবার রয়েছে তাদের। ছেড়া জুতা সেলাই আর পালিশ করাই তাদের কাজ। এ পেশায় তাদের নেই লজ্জা বা ঘৃনা। অন্যের পায়ের জুতা সেলাই পালিশ করেন তারা আপন মনে। জুতা সেলাই ১০ থেকে ২০ টাকা আর পালিশ ২০ থেকে ৩০ টাকা। এই হলো তাদের কাজের মজুরী। এই মজুরীতে আজকের জমানায় আর সংসার চলেনা।
জামালগঞ্জের রাস্তার পাশে জয়ন্ত রবিদাস বলেন ব্যবসায় হালচাল ভালো না। সারাদিন বসে বসেই দিন কাটাতে হয়। বছর পাচ আগেও দিনে ৪ থেকে ৫শত টাকা রোজগার হতো। বর্তমানে ২শত টাকা ও হয়না। দুই ঈদে এবং পুজায় কিছু কাজ হলেও সারাবছর অলস সময় বসে থাকতে হয়।
সুমন রবি দাস বলেন আমাদের দিনকাল ভালো যাচ্ছেনা। আগে আমরাই কুরবানীর ঈদে চামড়া সংগ্রহ করতাম। সে পেশাও এখন অন্যরা নিয়ে গেছে। প্রতি বছর ঈদে চামড়া ক্রয় বিক্রয় করে যা হতো তা’দিয়ে কয়েক মাস চলতো। বর্তমানে এই পেশা আর আমাদের মাঝে নাই। উপজেলার এসব জীবন সংগ্রামী মানুষগুলোর জন্য কখনো কোন সরকারী সমাজ সেবায় ঋণ ব্যতিত আর কোন সহায়তা তারা পায়নি। তারা কর্ম করেই বেচে থাকাতে চান।
কিছু পরিবার ছেড়া জুতা সেলাই কর্ম থেকে বাদ দিয়ে বাদ্য যন্ত্রের পেশায় চলে গেছে। বিভিন্ন মিছিল সমাবেশ কিংবা বিয়ে সাদিতে বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে যা রোজগার হয়তা দিয়ে কোন রকম মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।
এব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সাব্বির সারোয়ার জানান, এই উপজেলায় কয়েকশত অনগ্রসর জনগোষ্টি রয়েছে তারা উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে বিশেষ ভাতা পায় ৬৯ জন এবং শিক্ষা ভাতা পায় ১৪জন। এদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিয়ে ব্যবসা করার জন্য ভাতা প্রদান করা হয়।
Leave a Reply