মো: ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ
প্রকৃতির অপার সম্ভাবনাময় হাওর। এই হাওরের প্রতিটি সময় মানুষের উপভোগ্য। বৈশাখে ফসল তোলার সময় প্রকৃতির নতুন রুপে হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার ব্যস্ততায় ভরপুর হাওর। হাওরের লোকদের গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, হাঁসের খামার পানি শুকানোর সাথে সাথে হাওরে ছোট বড় বিল, পাখীদের কলকাকলী, শীতে হাওরে অতিথি পাখীর বিচরন। বর্ষায় হাওরের ছোট বড় দ্বীপের মতো গ্রাম বাড়ীঘর। বিকেলে সুর্যের মায়াবতী দৃশ্য কিংবা সন্ধার স্নীগ্ধতায় দুর বহুদুর গ্রামের পাশে সুর্যের নীল আভা। সবকিছু সৃষ্টিকর্তা যেন অকৃপন হাতে সাজিয়েছেন। হাওরের ভরা পানিতে ছোট ছোট নৌকা টর্চ লাইটের আলোতে মৎস্য শিকারীদের বিচরণ দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। হাওরের পানিতে চাঁদের আলোর মায়াভরা স্মৃতি যেন প্রতিটি মানুষের হৃদয় কারে। চাঁদনী রাতে নৌকায় বেড়ানো আর ছোট বড় ঢেউয়ে দোল খাওয়া স্মৃতি যেন ভোলার নয়। আবার বাতাসে দমকা হাওয়ায় গর্জে উঠা আপন (ছোট বড় ঢেউ) আতংকে বদলে যায় প্রকৃতির মোহনীয় রূপ। যা স্বচক্ষে না দেখলে আফসোস থেকে যাবে মানুষের। আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যে রয়েছে হাওরের অবদান। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও রাধারমনের হাত ধরে অনন্য উচ্চতায় পৌছেছে হাওরের মানুষের সংগীত। পুর্বেকার মানুষের মসজিদ মন্দিরে চরক পুজার পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে হাওরের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি কথা।
উপজেলার মোট উৎপাদিত ধানের প্রায় পঞ্চাশ সতাংশের বেশির ভাগ উৎপাদন হাওরাঞ্চল থেকে। এমন হাওর রয়েছে জামালগঞ্জের পাকনার হাওরে শুকনায় পাও বর্ষায় নাও এই হলো হাওরের বিচিত্র। হাওরে শুকনা মৌসুমে কার্তিকের শেষ দিকে দেখা যায় বিস্তির্ন হাওর সবুজ আর সবুজ। নিম্নাঞ্চলে সবুজ ফসলের হাসী আর উচু জায়গায় সবুজ গাছ আর গাছ। হাওরের বুকে আকা বাকা নানা খাল, বিল ডোবা, ছাড়াও নদীতো আছেই। বিল যা জলমগ্ন এলাকা গুলো মাছের অবয়ারন্য। নদীর দুপাশে রয়েছে বিস্তির্ন হিজল করছের বাগান। এই বাগানে শীতে পাখীর কলকাকলীতে প্রানবন্ত হয়ে উঠে হিজল করছের বাগ। বর্ষায় এই সময়ে পাকনার হাওরে কানাইখালী মরা নদীর দুই পাশে মাতার গাও আগার গাঙ্গের পাশে ফেনার বাক শান্তিপুরের বাগে রয়েছে হাজার হাজার হিজল করচ গাছ। যা দেখলে যে কোন মানুষের প্রান জুড়ায়। নদীর প্রবাহমান রাতে না থাকায় হাওরের বুকে কানাই খালি নদী এখন লেকের মত। প্রতি বছর শীতের মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখীর কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে থাকে এই জলরাশী। চারদিকে সবুজের সমরোহ বিশাল জলরাশীতে ঝাকে ঝাকে অতিথি পাখীর ভেসে বেড়ানোতে সকাল সন্ধায় যেন এক অপরুপ রূপ ধারন করে।
দুর দুরান্ত থেকে অনেক সময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সমাজিক সংগঠন বিভিন্ন সময় এই হিজল করচ বাগানে পিকনিক করতে আসেন। পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএস প্রায় ২০ বছর আগে জামালগঞ্জের পাকনার হাওর, শনির হাওরে সরকারী খাস জায়গায় হিজল করচের গাছ লাগান। এ গাছ এখন হাওরের রূপ সৌন্দর্য মানুষের মনে দুল খাচ্ছে। আমাদের দেশে ঋতু ভেদে ভ্রমনের জায়গা খোজার বিষয়ে অনেকের আগ্রহ রয়েছে। বর্ষায় যদি ভ্রমনে বের হন তাহলে জামালগঞ্জের কয়েকটি জায়গায় নাম রাখতে পারেন আপনার তালিকায়। বিশেষ করে জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনার বাক ইউনিয়নের মাতারগাও, বিনাজুরা, দৌলতপুর, উজান দৌলতপুর ও ফেনারবাকের কানাই খালীর নদীর দুপাশে হিজল করচ বাগান উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায় নৌকা ভ্রমনে সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই পাকনার হাওরে ভ্রমনে আপনি পাবেন অদ্ভুদ অনুভুতি। চারিদিকে সবুজ গাছের ছায়াময় পানির রং সবুজ আকার ধারন করে হয়ে উঠে জলরংয়ের ছবির মতো। তবে আসল আনন্দ রাতে। আকাশে রুপালী চাঁদ চাঁদের আলোয় গাছের মোহনায় রূপ। হয়তো আপনী এখানেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখীর খোজ পাবেন। বিশাল হাওরের মাছ ধরার জেলেদের কাছ থেকে কিনতে পারবেন টাটকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এসব নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে হলে সুনামগঞ্জ থেকে গাড়ীযোগে অথবা নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ থেকে নৌকা অথবা স্পীডবোট যোগে জামালগঞ্জ হয়ে ভীমখালী ইউনিয়নের কারেন্টের বাজার থেকে ছোট বড় শত শত নৌকা রয়েছে যা-দিয়ে আপনি ঘুরতে পারবেন হিজল করচ বাগান।
এব্যপারে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সিএনআরএস এর কো-অর্ডিনেটর ছাইফুল চৌধুরী জানান, সিএনআরএস একটি পরিবেশ বাদী সংস্থা। দুই দশক থেকে সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের হাওর পারের মানুষের জীবন জীবিকা ও পরিবেশ রক্ষায় জলজ বনের উদ্ভাবকের ভ‚মিকায় সুনামগঞ্জ জেলার পাকনার হাওর সহ বিভিন্ন হাওরে প্রায় দশ লক্ষ হিজল করচের গাছ রুপন করা হয়। যা এখন হাওরের সুন্দর্য বহন সহ পরিবেশ রক্ষা করে চলছে এবং বিভিন্ন দেশিও পাখি ও জলজ প্রানীর আবাস স্থলে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকীন নুর জানান, পর্যটনের সম্বাবনা জামালগঞ্জের অনেক জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাকনার হাওরের হিজল করচ বাগান। পর্যটকরা যাতে হাওরের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন এবং পর্যটনকে বিকশিত করার জন্য হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার করে দেওয়া হবে। পর্যটকদের যোগাযোগ ও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে সকল ধরনের সহযোগীতা করবে উপজেলা প্রশাসন।
Leave a Reply