যে সব আসনে প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান

যে সব আসনে প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান

একুশে সিলেট ডেস্ক

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি চলছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিতে। বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও দলটির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার স্ত্রী সিলেটের কৃতিসন্তান ডা. জুবাইদা রহমান কোথায়, কোনো কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিয়ে কৌতুহল সব মহলের।

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেই দেশে ফিরতে পারেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দেশে ফিরে অন্তত তিনটি আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন অন্তত একটি আসনে। অন্যদিকে, তার পুত্রবধূ জুবাইদা রহমানও প্রথমবারের মতো একটি আসনে প্রার্থী হতে পারেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দল পরিচালনা করছেন তারেক রহমান। বিগত সরকারের অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সত্ত্বেও তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনিই মূল কান্ডারি হবেন বলে দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করেন। প্রধান কান্ডারি হিসেবে খালেদা জিয়া আগে বেশির ভাগ সময় ৫টি আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ২০০৮ সালে তিনি ৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। তারেক রহমানও সর্বোচ্চ ৩টি আসনে নির্বাচন করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। তবে কোন তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, সর্বোপরি নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তার ঘনিষ্ঠজনতা মনে করেন, বগুড়ার একটি আসনে তিনি নির্বাচন করবেন এটি মোটামুটি নিশ্চিত।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বিবেচনায় নিয়ে অন্তত ১টি আসনে খালেদা জিয়ার নির্বাচন করা উচিত বলে মনে করে বিএনপি। ফলে সেভাবেই এক ধরনের মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। সব শেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ এবং ফেনী-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যমূলক মামলায় সাজা দিয়ে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৭, ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, চট্টগ্রাম-৮ ও ফেনী-১ আসনে তিনি জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ২১ হাজার ৯০৪ ভোটে জয়লাভ করেন খালেদা জিয়া। এরপর একই আসনে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ এবং চট্টগ্রাম-১ আসনে প্রার্থী হয়ে সব আসনে জয়লাভ করেন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষীপুর-২ এবং খুলনা-২ আসনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন খালেদা জিয়া। এবার ফেনী-১ বা বগুড়া-৬ বা ৭, এর মধ্যে যেকোনো একটি আসনে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারেন বলে বিএনপিতে আলোচনা আছে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ডা. জুবাইদা রহমানের। ইতোমধ্যে ওই সংসদীয় আসনের বিভিন্ন এলাকায় এ-সংক্রান্ত পোস্টার সাঁটিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের মতো তিনিও প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার জন্ম সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের কন্যা তিনি। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসার ঠিকানায় জুবাইদা রহমানের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে প্রথমে তাকে ভোটার হতে হয়। একজন ভোটার চাইলে দেশের যেকোনো আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।

সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে নির্বাচনে দাঁড় করানোর জন্য ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছেন সিলেট বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। জুবাইদা রহমানকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে সিলেট নগরজুড়ে পোস্টারিং করেছেন অনেকে। সিলেট-১ আসনটিকে বলা হয়- ‘যে দল সিলেট-১ আসনে বিজয়ী হয়- সেই দল সরকার গঠন করে।’

এ আসন থেকে তাই ডা. জুবাইদা রহমানকে চাচ্ছেন অনেকেই। এতে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের জয়লাভের পথ সহজ হবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। বিএনপির প্রার্থী ও ভোটাররাও মাঠে চাঙ্গা থাকবেন।

সম্প্রতি দেশে ফিরে গত ২৩ জুন ভোটার হয়েছেন জুবাইদা। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য তার তথ্য সংগ্রহ করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় ১৭ বছর দেশের বাইরে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি দেশে ফিরে ভোটার হালনাগাদ করতে হয়েছে তাকে। একই সময় থেকে তারেক রহমানও লন্ডনে বসবাস করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন সেই সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। এটা আগাম বলা কঠিন। তবে দেশে প্রত্যাবর্তনের আগে বড় সারপ্রাইজ থাকবে। দেখা যাবে হঠাৎ একদিন ঘোষণা আসবে, আগামীকাল দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। তার দেশে ফেরার দিনে কাউকে ঘোষণা দিয়ে ঢাকায় আসতে বলার প্রয়োজন পড়বে না। সেদিন ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে বাসা পর্যন্ত এমন জনস্রোত নামবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কেউ দেখেনি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন সেই সিদ্ধান্ত তিনি তার সুবিধামতো সময়েই নেবেন। এত বছর বাইরে রয়েছেন, পারিবারিক ও রাজনৈতিক সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয় রয়েছে। তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত আমরাও দিতে পারব না। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেকোনো সময় তিনি তারিখ ঘোষণা করতে পারেন। সে দিনই দেশবাসী ও আমরা জানতে পারব তার আগমনের কথা।’

তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে তার (তারেক রহমান) লেভেলের নেতার নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি সব মহলকে বিবেচনায় নিতে হবে। ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সারা দেশের মানুষের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করে গেছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘ম্যাডাম নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরু হলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ম্যাডাম এ বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff