প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা : যৌথবাহিনী বন্ধ করেছে জনতার বাজার, জমে উঠেছে মেলার বাজার

প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা : যৌথবাহিনী বন্ধ করেছে জনতার বাজার, জমে উঠেছে মেলার বাজার

এম,এ আহমদ আজাদ,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে পশুরহাট শনিবার বসতে দেয়নি আইন শৃংখলা বাহিনী। বহুল আলোচিত জনতার বাজার বন্ধ ঘোষনার পরপরই বাজার রক্ষার জন্য দিনারপুর পরগনাবাসী নামে ব্যানার দিয়ে একটি বিশাল মানববন্ধন করা হয়।

বাজারটি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা থাকলেও সিলেটের বৃহত্তম গরুর হাট বন্ধ হয়ে গেলে পার্শ্ববতী হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে তাৎক্ষনিকভাবে গরুর হাট বসানো হয়। জনতার বাজার থেকে উক্ত বাজারটি ৫০০ থেকে ১০০০ ফুট দুরে এই হাট বসানো হয়।

শনিবার সকালে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ টিম জনতার বাজারের আশপাশে অবস্থান নেয়। জনতার বাজারে আসা লোকজন ও গরু ব্যবসায়ীদের গরু নিয়ে বাজার ত্যাগ করার জন্য মাইকিং করেন। ফলে বাজারে আসার হাজার হাজার গরু ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েন। পরে তারা নিরোপায় হয়ে পাশ্ববর্তী হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে গরু নিয়ে উঠেন। মুহুর্তের মধ্যে সেখানে কয়েক হাজার গরু জমায়েত হলে পুরো বাজারটি জমে উঠে।

জনতার বাজার পরিচালনা কমিটি বলছে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসন তাদের বাজার বন্ধ করে দিয়েছে এই অভিযোগে দিনারপুর পরগনাবাসী নামে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন,ডাঃ আবুল কালাম আজাদ,আব্দুশ শহীদ,আব্দুর রশিদ,ময়না মিয়া, কাজী জাহিদ আহমদ, সাবেক মেম্বার স্বপন মিয়া প্রমুখ।

সভায় বক্তরা জনতার বাজারটি আদালতের নির্দশনা অমান্য করে প্রশাসনের লোকজন বাজারটি বন্ধ করেছেন। তারা দাবি জানান, সিলেটের সর্ব বৃহৎ এই গরুর হাট রক্ষা করতে তারা আগামীতে আরও কটোর কর্মসুচী ঘোষনা করবেন।
গতকাল সরজমিনে জনতার বাজার ঘুরে দেখা বাজারটি একদমখালি খাঁ খাঁ করছে, যেখানে হাট বারে ৮/১০ হাজার মানুষে ভীড় জমে উঠেতো অথচ গতকাল জনতার বাজারটি জনশুণ্য ছিলো। মামলার ভয় সব কিছুই যেন তুচ্ছ করে নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ‘জনতার বাজার’ পশুরহাট বসিয়েছে বাজার পরিচালনা কমিটি। যৌথবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রায় ৭০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হাট এলাকায় অভিযান চালান। একপর্যায়ে হাট কমিটির সদস্য ও অন্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাঁদের কাজে বাধা দেন। তাঁরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদারকে টেলা ধাক্কা ও লাঞ্চিত করা হয়। এরপরও দিনজুড়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পশুর হাট চালু রাখে হাট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পরদিন ১ জুন পানিউমদা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এমামলায় গত রবিবার(২৯ জুন) দুপুরে জনতার বাজারে সেনাবাহিনী,পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ জটিকা চিরুনি অভিযানে ১৩জনকে আটক করা হয়। গত ২৮ জুন শনিবার রাতে হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের মারধর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি ভাঙচুর করেন। ২৮ জুন ভোররাতে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নবীগঞ্জ থানার কনস্টেবল শাহ ইমরান (২৭), মোজাম্মেল হক (২৫) ও পল্টন চন্দ্র দাশ (২৫) আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যরা নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এঘটনায় ১৩জনকে আটক করা হয়। পরে ৮জন হবিগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়। বাকি ৫জনকে মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
গত ২৮ জুন শনিবার ভোররাতে এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামের নজর উদ্দিনকে (৪০) গ্রেপ্তার করতে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে নবীগঞ্জ থানা ও গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের একটি পুলিশ দল অভিযান চালায়। নজর উদ্দিনের বসতঘরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এ সময় অন্য আসামিরা গ্রামের মসজিদে ‘ডাকাত এসেছে’ বলে মাইকিং করেন। এতে গ্রামের দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালান এবং পুলিশের কাছ থেকে নজর উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয় এবং সংঘর্ষে পুলিশের একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

এর আগে, ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান হাটটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ৩১ জানুয়ারির পর হাট বন্ধের নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং ও নোটিশও টাঙানো হয়। নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা অনুমোদনহীন হাট পরিচালনা করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। তবে এসব নির্দেশনার বিরুদ্ধে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। তখন জেলা প্রশাসনের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করে রুল জারি করে। এর পর থেকে উক্ত বাজারটি থেকে সরকারীভাবে কোন রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে না। ফলে বাজার পরিচালনা কমিটি প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে।

১৯৭৫ সালে ঐ এলাকার উত্তর গজনাইপুর গ্রামের লোকজন হাজীগঞ্জ মেলার বাজার গরুর হাটটি বসানো হয় । সেখানে বাজার মালিক পক্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে খারাপ আচরণ করলে এর প্রতিবাদে ২০০১ সালে পাশ্ববর্তী দক্ষিন গজনাইপুরের লোকজন তাদের গ্রামের পাশে বসান জনতার বাজার নামক গরুর হাটটি। ক্রমান্বয়ে এই বাজারের পাশে দিয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক গেলে জমে উঠে পশুর হাটটি। এক পর্যায়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে বাজারটি হাকডাক। সারাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা আসতে থাকেন বাজারে ফলে এই গরুর হাটটি সিলেটের সবচেয়ে বড় গরুর হাটে রুপান্তর হয়। আর হাজীগঞ্জ মেলার বাজারটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। গতকাল জনতার বাজার বন্ধ হওয়ার কারনে আবারও মেলার বাজারটি জমে উঠে। পূর্ন জন্ম পেয়েছে হাজীগঞ্জ মেলার বাজার।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff