নতুন অধ্যাদেশ : যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতিত হলেও সরাসরি মামলা নয়

নতুন অধ্যাদেশ : যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতিত হলেও সরাসরি মামলা নয়

একুশে সিলেট ডেস্ক

যৌতুকের জন্য কোনো নারীকে তাঁর স্বামী বা স্বামীর পরিবারের কেউ বা তাঁর পক্ষে কেউ নির্যাতন করলেই সব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারীরা আর সরাসরি মামলা করতে পারবেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীকে মামলার আগে সালিসের পথে যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন করে নতুন যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, তাতে এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

১ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে। দেশে পারিবারিক সহিংসতা যখন বাড়ছে, তখন আইনের এ ধরনের পরিবর্তন নারী নির্যাতনের সঙ্গে সমাজে অস্থিরতা বাড়াবে বলে মনে করছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার নারীর মামলায় কোনো বাধা নেই। তবে নির্যাতন ও আঘাতের মাত্রা বিবেচনায় ভিন্ন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারার অপরাধের ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারীকে মামলার আগে মধ্যস্থতার পথে হাঁটতে হবে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীকে সাধারণ জখম (simple hurt) করলে তাঁর শাস্তি অনধিক পাঁচ বছর, কিন্তু অন্যূন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড। উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও হবে।

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারী সরাসরি মামলা করতে পারবেন না। তাঁকে প্রথমে লিগ্যাল এইড অফিসারের কাছে আবেদন করতে হবে। সেখানে মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে যেকোনো পক্ষ মামলা করতে পারবে।

আইনের এই পরিবর্তনের ফলে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

ইশরাত বলেন, ‘নারীদের বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি করা হয়। এখন যদি নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আদালতে এসে মামলা করতে না পারেন, তাহলে নারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচার পাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। এতে নারীদের ওপর নির্যাতন আরও বাড়বে। বাড়বে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিরতাও।’

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা হেল্পলাইন ১০৯-এ আসা ফোনকলের অর্ধেকই হলো পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ।

জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১০৯ হেল্পলাইনে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৬ ফোনকল আসে। ২০২৪ সালে পারিবারিক সহিংসতা-সম্পর্কিত ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৮টি ফোনকল আসে।

বাংলাদেশে উন্নত দেশের মতো আইনি সহায়তার কাঠামো গড়ে না ওঠায় সরাসরি মামলা থেকে নির্যাতিত নারীকে বাধা দেওয়া হলে আইনি প্রতিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল।

এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা যদি আদালতে গিয়ে সরাসরি আইনি প্রতিকার না পায় তাহলে নারী নির্যাতনের ঘটনা আরও বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত দেশে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে যেভাবে সেবা দেওয়া হয়, বাংলাদেশে সেই কাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। তাই বিকল্প প্রতিকারের ব্যবস্থা না রেখে এভাবে সরাসরি আইনি প্রতিকার থেকে নারীদের বঞ্চিত করা হলে সমস্যা কমবে না।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff