নবীগঞ্জ প্রতিনিধি
দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালির যাওয়ার পথে ৪ মাস ধরে নিখোঁজ নবীগঞ্জের তরুন আরফি চৌধুরী (২৩)। তার বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলা সদর ইউনিয়নের বড় আলিপুর গ্রামে। সে ঐ গ্রামের ময়মুন চৌধুরীর ৩ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ।
তরুণ আরফি চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জে হলেও কাজের সুবাদে হবিগঞ্জে থাকা কালীন সময়ে উত্তর শ্যামলি জামে মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করত আরফি চৌধুরী ।
সেই সুবাদে মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্বে থাকা শামায়ুন গনি (৪৫) নামের এক ব্যক্তির সাথে আরফি চৌধুরীর পরিচয় হয় শামায়ুন গুনি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামের আব্দুল গুনির ছেলে। তার সাথে আরফির পরিচয় হওয়ার,কিছু দিন পর মসজিদের মুয়াজ্জিন শাময়ুন গুনি লিবিয়ায় চলে যায়।
লিবিয়ায় যাওয়ার পর আরফির সাথে মাঝে মাঝে ফোনে যোগাযোগ করত। এর পর থেকেই আরফিকে বিভিন্ন ভাবে বিদেশ নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আসছিলো শামায়ুন গুনি। ২০২৪ এর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শামায়ুন গনি আরফিকে জানায়, ১৫ লক্ষ টাকা দিতে পারলে সে ইটালি পাঠিয়ে দিতে পারবে।
এবং সেখানে যাওয়ার পর মাসে এক লক্ষ টাকা করে আয় করতে পারবে। সে নিজে লিবিয়ায় এবং তার দুই ভাই ইতালি তাই সে সকল প্রকার সহযোগিতা করবে।
একপর্যায়ে শামায়ুন গনি আরফিকে তার বাবার সাথে দেখা করতে বলে। পরবর্তীতে শামায়ুনের বাবা আব্দুল গনি (৬০) ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর চুনারুঘাট উপজেলার ১ নং গাজীপুর ইউ/পি,কারিশা বস্তির মুজিবুর রহমান (৫৭) এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামের কেমিনুর তালুকদার কেমেন (২৮) কে নিয়ে আরফি চৌধুরীর বাড়িতে গেলে সকল কতাবার্তা চুড়ান্ত হয়। এবং আরফি চৌধুরীর বাবা কে আব্দুল গনি সহ সাথে থাকা দুইজন বলে শত শত লোক তারা ইটালি পাটাইছে। তখন শামায়ুনের বাবা আব্দুল গনির কাছে চার লক্ষ টাকা সহ আরফির পাসপোর্ট ও জমা দেওয়া হয়।
ঐ সময় শামায়ুন গনি ফোন করে বলে চিন্তা করবেন না আরফিকে কিছুদিনের মধ্যেই বিদেশ পাঠাব। জানুয়ারিতে আরফিকে শামায়ুন গুনি ফোন করে বলে তোমার সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। ২৩ জানুয়ারি সে আমার বাবা সহ আরও লোকজন যাবে তোমার বাড়িতে। তাদের সাথে তুমি চলে আসবে।
ঐদিন আব্দুল গনি, মুজিবুর রহমান এবং কেমিনুর তালুকদার কেমেন আরফির গ্রামের বাড়িতে এসে আরফিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়।
গত ২৪ জানুয়ারি তারিখে ঢাকা ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে ট্রানজিট দিয়ে ৩০ জানুয়ারি গিয়ে লিবিয়ায় পৌঁছে আরফি চৌধুরী , ঐ সময় বানিয়াচং উপজেলার শরিফখানি গ্রামের ফয়জুর রহমান (৩৫) এবং চুনারুঘাট উপজেলার ১ নং গাজীপুর ইউ/পির কারিশা বস্তি গ্রামের এমদাদুর রহমান (৩০) আরফি চৌধুরী কে রিসিভ করেন। তাদের বাসায় নিয়ে যায়,সেখান থেকে চার দিন থাকার পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এমদাদুর রহমান ও ফয়জুর রহামন শামায়ুনের বাসায় আরফি কে নিয়ে যায় । সেখানে যাওয়ার পর শামায়ুন গনির সাথে আরফির একটি সেলফি ছবি তুলে পরিবারের কাছে পাঠায়।
তখন আরফি বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় ফোনে তার বাবাকে জানায় যে শামায়ুন গনি সহ বাকিরা আরফিকে ইতালিতে পাঠানোর চেষ্টা করছে। আরফি তার বাবার সাথে ফোনে কথা বলার সময়ে আরফির বাবা জোরে চিৎকার শুনতে পান এবং সাথে সাথে ফোন কেটে যায়। আরফির বাবা সাথে সাথে আরফির ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পান এবং দালাল শামায়ুন গনির ফোনও বন্ধ পান।
২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরে আরফির সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় শামায়ুন গনির সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায় আরফিকে এক জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। ছাড়াতে হলে ১৮ লক্ষ টাকা লাগবে। তখন শামায়ুনের বাবা আব্দুল গনির সাথে যোগাযোগ করলে জানান আরফি জেলে আটক আছে তাকে তার ছেলে জেল থেকে বের করার জন্য চেষ্টা করছে। এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর শামায়ুনের বাবা আব্দুল গনি কে তাগিদ দিলে সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এর পর থেকে এখন পর্যন্ত আরফির কোন সন্ধান পায়নি পরিবার।
হতাশা নিয়ে নির্রঘুম দিন কাটছে আরফি চৌধুরীর পরিবারের কখন আরফি বাড়িতে ফোন করবে সে চিন্তায় ।
নিখোঁজ আরফি চৌধুরীর বাবা ময়মুন চৌধুরী জানান, দালাল শামায়ুন গুনি সহ এই চক্রের সদস্যদের কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায় না। আপোষের প্রস্তাব থাকায় এবং পরবর্তীতে আপোষ না মানায় আরফির বাবা নবীগন্জ থানায় মামলা করতে গেলে থানা কতৃপক্ষ বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন।
Leave a Reply