সিলেটে ফুঁসছে সুরমা-কুশিয়ারা : যেকোনো সময় বন্যায় ভাসতে পারে সিলেট

সিলেটে ফুঁসছে সুরমা-কুশিয়ারা : যেকোনো সময় বন্যায় ভাসতে পারে সিলেট

হিলাল উদ্দিন শিপু
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি সরে গেলেও তার প্রভাব রয়ে গেছে। টানা বর্ষণ চলছে সিলেট অঞ্চলজুড়ে। আবার উজানে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এর পানিও নেমে আসছে।

এ অবস্থায় সিলেটের নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু অংশ ডুবে গেছে। ফুঁসছে সুরমা-কুশিয়ারাও। বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও যখন তখন দুকূল ছাপিয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখী হতে পারে পুরো সিলেট বিভাগ।

গত কয়েকদিন ধরেই সিলেট অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির কারণে বরাবরই সিলেট অঞ্চল ভেসে যায়। এটা প্রতি বর্ষায়ই হয়।

এবারও তাই হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরছিল। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার পরিমাণ ছিল প্রায় ২২৯ মিলিমিটার। শুক্রবার রাত আর শনিবার মিলে এ অঞ্চলে চলীছল তুমুল বৃষ্টিপাত, যাকে বলে মুষলধারে বৃষ্টি। এমন বর্ষণে জনজীবনতো অচল হয়েই পড়েছে।

এদিকে আবার ক্ষনে ক্ষনে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সুরমা কুশিয়ারার পানি। শুক্রবার বিকেলেও বিপৎসীমার কয়েক ফুট নিচে থাকলেও রাতেই তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ের দিকে যেতে থাকে।

বৃষ্টি কেবল এদিকেই ঝরছে, তা না। ঝরছে উজানে, ভারতের আসাম এবং মেঘালয় রাজ্যে। ভারী না, রীতিমতো অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেখানে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে মোট ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আসাম মেঘালয়ের বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে আসে সুরমা কুশিয়ারা এবং সারি, সারিগোয়াইন, লোভাছাড়ার মতো পাহাড়ী নদী হয়ে। আর তখন দুকূল ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সুরমা-কুশিয়ারা যেভাবে ফুঁসছে, যখন তখন বন্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ২ দশমিক ৫২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার সকাল ৬টায় বইছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক শূণ্য ৪ মিটার নিচ দিয়ে। আর বিকেল ৩টায় এ পয়েন্টে সুরমার পানি বইছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক শূণ্য ৯ মিটার নিচ দিয়ে। পানি যেভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় হ্রাসবৃদ্ধি হচ্ছে, এতে যখন তখন ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সিলেট পয়েন্টে সুরমা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বইছিল বিপৎসীমার দুই দশমিক ১৯ মিটার নিচ দিয়ে। শনিবার সকাল ৬টায় এই পয়েন্ট পানি ছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক ৮৬ মিটার নিচে। আর বিকেল ৩টার দিকে পানি ছিল ১ দশমিক ৪৯ মিটার নিচে। অর্থাৎ এ পয়েন্টে ৯ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ৩৭ সেন্টিমিটার।

এদিকে কুশিয়ারার পানি আমলসীদে শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিল বিপৎসীমার ৫ দশমিক ৪২ মিটার নিচে। শনিবার দুপুর ১২টায় এ পয়েন্টে পানি বইছিল বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৭ মিটার নিচ দিয়ে। বিকেল ৩টার হিসাব দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ পয়েন্টে সকাল ৬টায় পানি ছিল বিপৎসীমার দুই দশমিক ৯২ মিটার নিচে। ৬ ঘন্টার ব্যবধানে এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৪৫ সেন্টিমিটার।

শেওলা পয়েন্টেও যথারীতি ফুঁসছে কুশিয়ারা। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় এ পয়েন্টে পানি ছিল বিপৎসীমার ৪ দশমিক শুণ্য ৪ মিটার নিচে। শনিবার সকাল ৬টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার নিচে। আর বিকের ৩টায় পানি ছিল বিপৎসীমার ২ দশমিক ৬৫ মিটার নিচে। অর্থ্যাৎ এ পয়েন্টে ৯ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ৬২ সেন্টিমিটার।

ফেঞ্চুগঞ্জে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুশিয়ারা পানি ছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬৭ মিটার নিচে। শনিবার সকাল ৬টায় ছিল ১ দশমিক ৪৬ মিটার নিচে। বিকেল তিনটায় ছিল ১ দশমিক ১১ মিটার নিচে। ৯ ঘন্টায় এ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বেড়েছে ৩৫ সেন্টিমিটার।

ফেঞ্চুগঞ্জে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুশিয়ারা পানি ছিল বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬৭ মিটার নিচে। শনিবার সকাল ৬টায় ছিল ১ দশমিক ৪৬ মিটার নিচে। বিকেল তিনটায় ছিল ১ দশমিক ১১ মিটার নিচে। ৯ ঘন্টায় এ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বেড়েছে ৩৫ সেন্টিমিটার।

এদিকে লোভাছড়ার কোনো বিপৎসীমা না থাকলেও পাহাড়ী ঢলে নদীটির পানি শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ছিল ১২ দশমিক ৫ মিটার উঁচুতে।

আর সারিঘাটে সারি নদীর পানি শনিবার বিকেল ৩টায় ছিল বিপৎসীমার মাত্র শুণ্য দশমিক শুণ্য ৮৩ মিটার নিচে।

গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ডাউকির পানি শনিবার বিকেলে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৩০ মিটার নিচে ছিল। গোয়াইনঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি ছিল বিপৎসীমার মাত্র ৭৬ সেন্টিমিটার নিচে।

সিলেটে বৃষ্টি যাইহোক না কেন, আসাম আর মেঘালয়ে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে যেকোনো সময়ে বন্যায় ভাসতে পারে সিলেট অঞ্চল। আর আবহাওয়া অফিস কয়েকদিন আগেই এ অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার সতর্কতা জারি করে রেখেছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff