একুশে সিলেট ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পরও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় বিএনপি হতাশ বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘২৪ মে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। একই দিনে আরও দুটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের ) সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি। পরের দিন আরও ২০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) সাক্ষাৎ করেন। রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়ই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনো চায় না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বর, ২০২৫-এর মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটি একই সঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও ব্যক্তি অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনায় আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে অদ্যাবধি সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতির কারণে এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ারবর্হিভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে, অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কাল বিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তামান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমরা ইতিবাচক বার্তা চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটি সরকার করেনি। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করার কোনো উপযুক্ত সময় নয়। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান, এসএসসি পরীক্ষা এবং দুর্যোগ দেখা যায়।’ সংস্কারের উসিলা করে নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
Leave a Reply