একুশে সিলেট ডেস্ক
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সর্ববৃহৎ ড্রোন শো প্রদর্শিত হয়েছে। এতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদ, পানির বোতল হাতে প্রতীকী মুগ্ধর ছবিসহ আরও বেশকিছু ছবি তুলে ধরা হয়।
তবে ড্রোন শোতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামের ছবি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। বিষয়টিতে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত ১১টা ২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, ‘এই কয় সপ্তাহের ঝড়ের পর ক্লান্ত শরীরে ঘরে ঢুকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভাই-বোনদের বিবৃতিটা চোখে পড়লো। হয়তো আমি তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে পারতাম। কিন্তু পাবলিক রেকর্ডসের জন্য এখানেই লিখছি।’
‘আজকের ড্রোন শোতে শহীদ ওয়াসিমের ছবি না থাকায় তাদের ব্যথিত হওয়া শতভাগ যৌক্তিক। এই দুঃখ আমারও। যাত্রাবাড়ীর কোনো মাদরাসাছাত্রের ছবি না রাখতে পারার দুঃখও আছে। আরও অনেককে মিস করেছি আমি নিজেও। কিন্তু আইকনিক ইমেজ বাছাই, স্টোরিটেলিংয়ের থিমেটিক ফ্লো ঠিক রাখা এবং বেশি ইমেজ বাছাই করার সুযোগ না থাকাতে এই অবস্থায় পড়েছি আমরা।’
তিনি লেখেন, ‘মনে রাখবেন প্লিজ, আমি শহীদদের দলের ভিত্তিতে ভাগ করে গুরুত্ব বা কম গুরুত্ব দিয়েছি তা না। জুলাইয়ের সব শহীদই সমান। শুধু জুলাই না, এর আগের ১৬ বছরে গুম-খুনের শিকার সবার ত্যাগেই ফ্যাসিবাদের পতন। তারা প্রত্যেকেই আমাদের হিরো। আমার জুলাই-আগস্ট বা ২০১৪-১৫ সালের লেখালেখি পড়ার সুযোগ হলে দেখতে পাবেন আমি কী কী বলার চেষ্টা করেছি।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও লেখেন, ‘আমি শুধু এইটুকু বলবো, আপনারা দয়া করে জুলাই জাদুঘরের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। সেখানে আমাদের কালের নির্যাতিত, শহীদ, গুম হয়ে যাওয়া সবাইকে পাবেন, সবার গল্পগুলা পাবেন। যে মানুষদের প্রাণের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, তাদের আমাদের স্মরণ করতে হবে, তাদের জন্য বেদনায় মন খারাপ হয়ে যেতে হবে। কারণ বেদনা আমাদের মন এবং ইতিহাস দুইটাই পরিশুদ্ধ করে। বেদনা জারি থাকা তাই ভালো। সব শহীদ ও গুম হওয়া মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা।’
এর আগে, ড্রোন শোতে জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামে শহীদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামকে স্মরণ না করায় ফেসবুকে পোস্ট দেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘আজ সরকারি আয়োজনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ড্রোন শো হয়েছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করা হচ্ছে। কিন্তু শুধু শহীদ আবু সাঈদ এবং মীর মুগ্ধকে স্মরণ করা হচ্ছে। দুঃখজনকভাবে আবু সাঈদের সঙ্গে একই সময়ে শহীদ হওয়া চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামকে স্মরণ করা হয়নি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘কিছুদিন আগে গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের আত্মপ্রকাশের কর্মসূচিতে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নাম বলেনি। তারা গণঅভ্যুত্থানের শহীদ এবং অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধারণ করার কথা বললেও সচেতনভাবে শহীদ ওয়াসিম আকরামকে উপেক্ষা করেছে। একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তারা এমন করতেই পারে। কিন্তু এর আগে পাঠ্যপুস্তক থেকে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নাম বাদ দিয়েছিল সরকার। সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে শহীদ ওয়াসিম আকরামের আত্মত্যাগ এড়িয়ে যেতে চায়।’
নাছির লেখেন, ‘শহীদ ওয়াসিম আকরাম সরকারি চাকরিপ্রার্থী ছিলেন না। কোটা সংস্কার নয়, বরং ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ওয়াসিম। শহীদ ওয়াসিম আকরাম একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং ছাত্রদল নেতা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তার অংশগ্রহণের ইতিহাস সুদীর্ঘ।’
তিনি আরও লেখেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ভয় পাচ্ছে। তাদের একটা অংশের বিরাজনীতিকরণের চক্রান্তের সামনে পথের কাঁটা কেবল শহীদ ওয়াসিম আকরামের মতো ছাত্রনেতারা। তাই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে শহীদ ওয়াসিম আকরামকে উপেক্ষা করে। আমরা কেউ এতে বিচলিত নই। শহীদ ওয়াসিম আকরাম নিজের রক্ত দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস লিখে গেছেন। যতদিন দেশের মানুষের মননে গণতান্ত্রিক চেতনা সমুন্নত থাকবে, শহীদ ওয়াসিম আকরাম ততদিন অমর হয়ে থাকবেন।’
Leave a Reply