জাফলংয়ে ইসিএভূক্ত এলাকায় পাথরখেকুদের তান্ডবলীলা!

জাফলংয়ে ইসিএভূক্ত এলাকায় পাথরখেকুদের তান্ডবলীলা!

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বালিঘাট মন্দিরের জুম পাড় নামক স্থানে রাতের আধারে ফেলুডার মেশিন দিয়ে দেদারসে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর।

জুম পাড় কেটে অবৈধ ভাবে অর্ধশতাধিক পাথর উত্তোলনের কারণে হুমকি মূখে রয়েছে শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দিরসহ অসংখ্য ফসলী জমি, পান সুপারীর বাগান, চা বাগান ও বসতবাড়ি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দলনে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই জাফলংয়ের পাথর কোয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। শুধু জাফলং পাথর কোয়ারী থেকে প্রায় শত কোটি টাকার পাথর লুট হয়।

পাথর লুট-পাটে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.বদরুল হুদা বাদী হয়ে পৃথক-পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে পাথর লুট-পাটকারী মামলার আসামীরা এখনো রয়েগেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগের দোস’র বিগত সময়ে যারা জাফলংয়ে লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ওইসব দোস’রদের পূর্ণভাসনের জন্য নামধারী কিছু বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আড়ালে থেকেই এসব অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

পরিদর্শন কালে স্থানীয়রা জানান, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা শাহ আলম স্বপন, শাহপরাণ ছাড়া ও হেনরিলামীন ও ট্রাক-শ্রমিক নেতা ছমেদের নের্তৃত্বে জাফলংয়ের বল্লাপুঞ্জি, মন্দির’র জুমপাড়, জিরোপ্রয়েন্ট, বাবুল’র জুম এলাকা, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর জাফলং সেতু সংলগ্ন পাথর কোয়ারী এলাকায় অবৈধভাবে দানবযন্ত্র ফেলুডার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পাথর উত্তোলনের চলছে মহোৎসব। অবৈধ ভাবে ফেলুডার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে জুমপাড় এলাকায় শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দির,বল্লাঘাটের পুরাতন পর্যটন স্পট, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, শত হেক্টর ফসলী জমি, চা বাগান, জাফলং সেতু, জাফলং বাজার, নয়াবস্তী, কান্দুবস্তী গ্রামের বসতবাড়ী ও খাসিয়া সম্পাদায়ের, পান সুপারীর বাগান সহ আশ পাশের এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশস্কা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক এলাকার একাধিক লোকজন জানান, পাথর খেঁকুদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের মুঠা অংকের টাকা ভাগ-বাটুয়ার হয় এ কারণে প্রশাসন নিরব থাকে। ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক সাথে মিলেমিশে বীরদর্পে ফেলুডার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে তারা অবৈধ পাথর উত্তোলনের কাজ চলমান রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসনের লোক দেখানো টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযান পরিচালনাকারী দল ঘটনাস্থল পৌছানোর আগেই আগাম খবর চলে যায় পাথর খেঁকু চক্রের কাছে যে কারণে বল্লাঘাট জুম পাড় এলাকায় মন্দিরের মাটি কেটে অবৈধ পাথর উত্তোলন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বৈচিএের কাল্পনিক দৃশ্য ভ্রমণ পিপাসুদের অভয়রণ্য জাফলং। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা এ জনপদ ও প্রকৃতি কন্যা জাফলং এর প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে ভ্রমন পিপাসু হাজারও পর্যটক।

কিন্তু কালের বিবর্তনে হারাচ্ছে অপরূপ স্যেন্দর্যের লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং তার নিজস্ব রূপলাবণ্য। এসব পাথর খেঁকু চক্রের সদস্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নামধারী নেতাদের কাছে আজ পরাস্ত প্রকৃতি কন্যা জাফলং।এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধধজ্ঞা জারী থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছেনা কোন আইনগত ব্যবস্থা। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরে অবহেলা থানা পুলিশের গাফলাতির কারনে পাথর উত্তোলনের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে চা বাগান, ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সাধারণ মানুষ হারাচ্ছে ফসলী জমি ও আবাসস্থল। এসব এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন ও অপসারণ করতে খনিজ মন্ত্রণালয়ের সংশি¬ষ্ট বিভাগের অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও এসব নিয়মের কোন ধারে কাছেই নেই কেউ।

তাছাড়াও মন্দিরের জুমপাড় এলাকা একটি বিবাদমান এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বিগত সময়ে শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দিরের পাড় এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলনের সময় মাটির পাড় ধসে, মাটি চাপায় পাচ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিগত সময়ে অর্থাৎ ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে উক্ত ভূমি থেকে পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিবাদমান ব্যাক্তিদের মধ্যে গুলাগুলি হয় এসময় জুমপাড় এলাকা সংলগ্ন কান্দুবস্তী গ্রামের লিটন নামের এক স্কুল ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

এব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ জানান, অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন বন্দে থানা পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া আমরা অভিযানে গেলে তারা টের পেয়ে কেীশলে

সহকারী কমিশনার ভুমি সাইদুল ইসলাম বলেন, জাফলং ইসিএ এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের দায়ে বেশকটি মামলা হয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া তিনি প্রতিবেদককে জানান আমাদের মামলা আছে , তবে থানা- পুলিশ কেন আসামী ধরতে পারছে না আমার জানা নেই।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন, জাফলং ইসিএ এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করেও পাথর খেকোদের থামানো সম্ভব হচ্ছেনা। এ বিষয়ে পরিবেশে অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া স্থানীয় জনগণ আমাদের সহযোগিতা করছে।

এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, এটা মুলত খনিজ সম্পদ অধিদপ্তরে কাজ। প্রতিবেদক পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কাজ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের ও কিছু পরিবেশগত কাজ রয়েছে তাই আমরা নিয়মিত অভিযান ছাড়া ও মামলা দায়ের করেছি। মামলার আসামেদের ধরতে আমরা সিলেট পুলিশ সুপারের কাছে সকল কাজপত্র হস্তান্তর করেছি।

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ.মাহবুব মুরাদ বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর ও বালু লুটপাটের সাথে জড়িদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অভ্যাহত রয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff