গুলশানে টিউলিপের ‘ঘুষের ফ্ল্যাট’, দুদকের মামলা

গুলশানে টিউলিপের ‘ঘুষের ফ্ল্যাট’, দুদকের মামলা

একুশে সিলেট ডেস্ক

ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে রাজধানীর গুলশান এলাকায় ‘পারিতোষিক’ হিসেবে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টিউলিপ ছাড়াও রাজউকের সাবেক দুই আইন উপদেষ্টাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ সংস্থাটির সহকারী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। কমিশনের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি জানিয়েছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেন।

এই তিন আসামি ছাড়াও মৃত্যুর কারণে মামলা থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুই আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিমের ভাই রাজউকের সাবেক আইন উপদেষ্টা ড. মো. সেলিম ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম।

মামলার এজাহারে থেকে জানা যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার গুলশান-২-এর কূটনৈতিক এলাকায় ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দেন টিউলিপ। এর বিনিময়ে অবৈধ পারিতোষিক হিসেবে ওই প্লটের একটি ফ্ল্যাট পান তিনি। ফ্ল্যাটের দাম ২৩ লাখ টাকা ধার্য করা করা হলেও এই ফ্ল্যাট বাবদ ইস্টার্ন হাউজিংকে এক টাকাও পরিশোধ করেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাগনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ ঘুষ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাট দখলে নেয়। এরপর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে গুলশান-২-এর ফ্ল্যাটটি (ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি (পুরোনো), বর্তমানে ১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নম্বর ৭১, রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ ও প্রদান করেছেন।

সূত্রটি জানায়, ইস্টার্ন হাউজিং গুলশানের যে জমিতে ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন সেটিও তাঁদের না। জমিটি মূলত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার সাবেক প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরীকে ডিআইটি থেকে ১ বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ প্রদান করে। ২০৬৩ সালের আগে এই জমি বিক্রি বা বরাদ্দের নিয়ম নেই। সেই জমি নিয়মবহির্ভূতভাবে রাজউকের সাবেক আইন উপদেষ্টার সহযোগিতায় আমমোক্তারনামা করে করে লিখে নেন ইস্টার্ন হাউজিং। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের করা সেই জমিতে প্লট বরাদ্দ নেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে জমির ক্রয় বাবদ তিনি কোনো টাকা পরিশোধ করেননি।

দুদক সূত্রটি আরও জানায়, ১৯৯৭ সালে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে বরাদ্দ নেন টিউলিপ সিদ্দিক। সেই ফ্ল্যাট ২০০২ সালে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে ফ্ল্যাট প্রদানের বিপরীতে ইস্টার্ন হাউজিং ফ্ল্যাট কেনা বাবদ টাকা প্রদানের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। দুদকের কাছে তাঁরা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এই ফ্ল্যাট বাবদ সর্বশেষ ২০২২ পর্যন্ত টাকা পরিশোধের তাগাদা দিলেও টিউলিপ টাকা প্রদান করেননি।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি ৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫ (ক)/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব সাত সদস্যদের টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অপর সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
গুলশানের সেই ফ্ল্যাট এখনো টিউলিপ সিদ্দিকের নামে, ডেইলি মেইলের দাবিগুলশানের সেই ফ্ল্যাট এখনো টিউলিপ সিদ্দিকের নামে, ডেইলি মেইলের দাবি

গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক আটটি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে এসব চার্জশিট আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff