বানিয়াচংয়ে নাইন মার্ডারের আসামী ইউপি চেয়ারম্যান পুলিশের চোখে পলাতক!

বানিয়াচংয়ে নাইন মার্ডারের আসামী ইউপি চেয়ারম্যান পুলিশের চোখে পলাতক!

কাওছার আহমেদ রাসেল
দুই টার্ম ধরে বানিয়াচং উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করছেন মঞ্জু কুমার দাষ ।২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্য়ন্ত ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমান রেখেছ্নে।এলাকায় আওয়ামীলগের নেতা-কর্মীদের কাছে কাহা বাবু নামে পরিচিত।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ই আগষ্টে আলোচিত নাইন মার্ডার মামলার এজাহারভুক্ত ৪৩ নং আসামী তিনি।মর্মান্তিক এই নাইন মার্ডার ঘটনার সাত মাস পেরুলো ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাষ এখনো আছেন বহাল তবিয়তে।প্রসাশন তার ঠিকিটি পর্য়ন্ত স্পর্শ করতে পারেনি।চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাষের বিরুদ্বে এখন পর্য়ন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বানিয়াচং ছাত্র-জনতা হত্যার দায়ে বানিয়াচং থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত ৪৩ নম্বর আসামি এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে দায়ের করা অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও জামিন ছাড়াই রয়েছেন অধরা।বুক চেতিয়ে দাপটের সাথেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে বানিয়াচং থানা ও মার্কুলি নৌফাঁড়ি পুলিশ এ বিষয়ে রহস্যজনক নীরব ভূমিকা পালন করায় ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার বাদী, বানিয়াচং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত আহত ও নিহতদের পরিবার এবং সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এই প্রতিবেদকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত এলাকাবাসী। তারা চেয়ারম্যান মঞ্জু দাষের এভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততায় চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্র্রকাশ করেন।আন্দোলনে নিহত-আহতদের পরিবারের সদস্যরা বলেন,২০২৪ এর জুলাই বিল্পবে সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী এই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।এজাহার সূত্রে জানা যায় ৫ই আগষ্ট বানিয়াচংয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার মিছিলে সসস্ত্র হামলা করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ।তাদের বুলেটের গুলিতে প্রাণ হারান নয়জন।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নয়টি হত্যা মামলার আসামি চেয়ারম্যান মঞ্জু দাষ। অথচ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না।নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দুরত্ব প্রায় ২০০ গজ।প্রায় সময় রাতে ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলীগের লোকজন নিয়ে রাজনৈতিক মিটিং করেন।উপজেলা সদরের আ,লীগের নেতারা পলাতক হলে ও অনেকটা নির্ভয়ে মঞ্জু দাষ গোপনে ফ্যাসিস্ট আ,লীগের প্রতিনিধি হয়ে দৌলতপুর ইউনিয়নসহ বানিয়াচংয়ে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য কাজ করছেন।ভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর,হিলালনগর,করচা,আড়িয়ামুগুর এবং পাহাড়পুড় এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টাও চালাচ্ছেন চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাষ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে,আওয়ামী লীগ আমলে মঞ্জু নামে বেনামে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প,টি আর,কাবিহা হরিলুট,গভীর নলকুপ বানিজ্য,ভিজিএফ কার্ড,বয়ষ্ক-বিধবা ভাতাসহ সেবার নামে অদৃশ্য ছাঁয়া হয়ে তার পরিষদের অনুগত সদস্যদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।নিজ এলাকা হিলাল নগর সহ পার্শবর্তী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আছে তার জমজমাট চড়া সুদে টাকা লগ্নির ব্যবসা।তার এই মহাজনী প্রথায় নি:স্ব হয়েছেন অনেক সংখ্যালগু পরিবার।এলাকার সকল জলমহাল তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।স্থানীয় কৃষকদের বাধ্য করতেন নিজ মালিকানাধীন অটো রাইসমিলে কম দামে ধান বিক্রি করতে। নিজ এলাকায় শত শত একর জমি ছাড়া ও মার্কুলি বাজারে দুতলা দুটি ভবন,শ্রীমঙ্গলে দুটি বাসা,ঢাকায় ফ্ল্যাট সহ রয়েছে নামে-বেনামে অনেক সম্পত্তি।এসকল সম্পত্তি সব অনৈতিক পথে অর্জিত যা তিনি আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় পদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাব খাটিয়ে করেছেন।

মার্কুলী হরিনা মহাযজ্ঞ কীর্তন কমিটির সহ-সভাপতি নিধু দাষ বলেন,চেয়ারম্যন মঞ্জু আমাদের কীর্তন কমিটির সভাপতি হয়ে ও দূর্নীতি করে কীর্তন কমিটির টাকা আত্মসাত করেছেন।এনিয়ে কীর্তন কমিটির ২০০ জন সদস্য স্বাক্ষর করে ইউএনও ও বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

মার্কুলী বাজারের ব্যবসায়ী কাজল দাষ নবিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হয়েও চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাছ থেকে পেয়েছেন গভীল নলকুপ।কিন্তু জেলে সম্প্রদায়ের কপালে জোটেনি টিউবওয়েল।
নদী পাড়ের অনিকা বর্মন বলেন,আমরা বিশুদ্ধ পানি থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত।বারবার চেয়ারম্যান বাবুকে অনুরোধ করেও আমরা একটি টিউবওয়েল পাইনি।

মার্কুলী বাজার কমিটির সেক্রেটারী মোছাব্বির মিয়া বলেন,চেয়ারম্যান মঞ্জু দাষের সাথে কীর্তন কমিটির বিরোধ মীমংসার জন্য বানিয়াচং থানার ওসি সাহেব আমাকে একমাস আগে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।কিন্তু কীর্তন কমিটির লোকজনের বিরোধীতার জন্য নিষ্পত্তি করতে পারিনি।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ও মঞ্জু দাষের প্রভাব কমেনি।উপজেলার গুটি কয়েক বিএনপি নেতা ও পুলিশকে ম্যানেজড করে ব্যবসা বানিজ্য সহ দাপটের সাথে চলাফেরা করছেন তিনি। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে মঞ্জু কুমার দাষের সাথে কথা হলে তিনি জানান,আমি নিয়মিত পরিষদে আমার ইউনিয়নের জনগনকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।রাতে পরিষদে রাজনৈতিক মিটিং করার কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে আমি মাঝে মাঝে রাতে পরিষদের কাজ করি।দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এসব আমার বিরোধী পক্ষের অপ-প্রচার।আমার স্থাবর-অস্থাবর সব পৈত্রিক সম্পত্তি।কথা প্রসঙ্গে দম্ভোক্তি করে মঞ্জু দাষ বলেন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাকে ফোন দেয়।আমার বিরুদ্ধে লিখে কিছু হবেনা।

বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান,তাকে আটক করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।বেশ কয়েকবার অভিযান ও চালিয়েছি।

এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম সাথী বলেন,ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff